Friday, February 28, 2020

৭১' এর মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর অসামান্য অবদান!!!

৭১' এর মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর অসামান্য অবদান!!!



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রয়েছে অসামান্য অবদান। তিনি শুধু এক কোটি বাংলাদেশীকে আশ্রয় ও খাওয়া-পরার ব্যবস্থাই করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন। আর বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি মার্কিন রক্তচক্ষুর বিপরীতে এক অনন্য অবস্থানও নেন তিনি।
বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধেও পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা করলে সেখানেও এক হয়ে পকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশের লাখ লাখ শরণার্থীকে সেবাযত্ন করায় ইন্দিরা গান্ধীর এ কাজকে যীশু খৃষ্টের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন নোবেলজয়ী মাদার তেরেসা। ‘তারা সবাই ঈশ্বরের সন্তান’ শীর্ষক একটি বইয়ে তেরেসা এ বিষয়টি উল্লেখ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ সম্মাননা জানাচ্ছে স্বাধীনতার ৪০ বছর পর। সোমবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মনানা ‘স্বাধীনতার সম্মাননা’ জানানো হবে তাকে। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে সম্মাননা নেবেন তার পুত্রবধু সোনিয়া গান্ধী। সোমবার বিকেল পাঁচটায় বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেয়া হবে।
২৫ মার্চ ১৯৭১। ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাতের অন্ধকারে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হাজার হাজার নারী, পুরুষ, ছাত্র, শিক্ষক, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের নির্বিচারে হত্যা করে। বিভীষিকাময় এ অবস্থায় থেকে বাঁচতে লাখ লাখ নারী-পুরুষ বাধ্য হয়ে পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়।
ভারতের সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন উদ্বাস্ত্তকে আশ্রয় দেন। তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সাহায্য করেন। পরম মমতায় সেদিন ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ান ও আশ্রিতদের সহায়তার জন্য ভারতবাসীকে অনুরোধ করেন।
শুধু উদ্বাস্ত্ত বা শরণার্থীদের আশ্রয়ই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী হিসেবে প্রতিবাদী অথচ নিরস্ত্র বাঙালিকে সাহস জোগান তিনি। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, যুবকদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ভারতে। এর ফলেই অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হয় বাংলাদেশীদের। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে একের পর এক গেরিলা যুদ্ধে পরাস্ত করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে।
মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়েই, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “পূর্ব বাংলায় যা ঘটেছে, তাতে ভারত সরকার নীরব থাকবে না।” পরে ১৭ মে তিনি পশ্চিমবঙ্গ আসেন। কারণ সেখানেই সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রয় নেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, শরণার্থী বিষয়ে কেন্দ্র তাদের পাশে আছে ও থাকবে।
এর আগেই ৩০ এপ্রিল ’৭১ ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেন। ৯ মে তাদের হাতে দেয়া হয় হয় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে আগ্রহী বাংলাদেশের তরুণদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়ার দায়িত্ব।

এছাড়াও, শাসক পাকিস্তানিদের বাংলাদেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন আদায়ে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সেসময় বিভিন্ন দেশ সফরও করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়েও সক্ষম হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য একটি ট্রান্সমিটার বরাদ্দ করেন ইন্দিরা গান্ধী।
১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বিশ্বশান্তি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
সেখানে এক বিশেষ বার্তা পাঠিয়ে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “পূর্ববঙ্গের ঘটনায় ভারতের পক্ষে উদাসীন থাকা কঠিন এবং ইতিমধ্যে ২০ লাখ শারণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব উদ্বাস্তু যাতে সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরতে পারে সেজন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করতে হবে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং সামরিক সাহায্য বন্ধের বিষয়ে অক্ষমতা জানালে ইন্দিরা গান্ধী তাকে বলেন, “ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহয়তা বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই।”
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় এক জনসভায় ইন্দিরা গান্ধী ভাষণ দেয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতেও আক্রমণ করে। তিনি সেদনিই তার মন্ত্রিসভার ভাষণে বলেন, “আমি এ মুহূর্তে আমাদের দেশের এবং জনগণের গুরুতর বিপদের কথা উল্লেখ করে আপনাদের উদ্দেশে বলছি, কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে। পাকিস্তানি বাহিনী হঠাৎ করে আমাদের এয়ার ফিল্ড, অমৃতসার, পাঠান কোর্ট, শ্রীনগর, অবন্তীপুর, উতরলেট এবং আগ্রায় আঘাত হেনেছে। এতদিন ধরে বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল, তা ভারতের বিরুদ্ধে পরিণত হয়েছে।’’
এর পরপরই ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী মিলিতভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং পাকবাহিনী বিভিন্ন রনাঙ্গণে পরাজিত হতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ৬ ডিসেম্বর ইন্দিরা সরকার বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় অনেক সৈন্যও শহীদ হয়।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও অগণিত মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ আমরা বিজয় অর্জন করি।

ইন্দিরা গান্ধী বার বার সতর্ক করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে

ইন্দিরা গান্ধী বার বার সতর্ক করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন কোন বাঙ্গালী তাকে মারতে পারেনা। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বার বার সতর্ক করার পর ও তার একই বিশ্বাস, যে পাকিস্তানী আমাকে মারতে পারেনি আর আমার কোন বাঙ্গালী আমাকে মারতে আসতে পারে না।
নিজের দেশের মানুষের প্রতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বাস এতই দৃঢ় ছিল যে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন পূর্বাভাস পেয়েও তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আগেই তথ্য ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স উইং, সংক্ষেপে ‘র’ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’সহ একাধিক বিদেশি সংস্থার কাছে। সম্ভাব্য এই অভ্যুত্থানের বিষয়ে ‘র’ এর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুকে সতর্কও করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
একইভাবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ১৯৭৪-এর ডিসেম্বর এবং ১৯৭৫-এর মার্চে সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে সতর্ক করে। এ খবর উঠে এসেছে ইন্দিরা গান্ধীর একটি আত্মজীবনীতে। মার্কিন দলিলপত্র অনুযায়ী, ’৭৪-এর মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিকভাবেই সম্ভাব্য ক্যু এবং তার পরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ছিল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ নিয়মিতই এ বিষয়ে তথ্য পেলেও পঁচাত্তরে সংস্থাটি ছিল পুরোপুরি নীরব। অবশ্য কোনো সতর্কতাকেই তেমন একটা গুরুত্ব দেননি বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশের কেউ তাকে হত্যা করতে পারে এমন কথা তিনি বিশ্বাসই করতেন না। ‘ইন্দিরা গান্ধী : এ বায়োগ্রাফি’ শীর্ষক বইয়ে ভারতীয় লেখক পুপুল জয়কর লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে ১৫ আগস্টের প্রভাতে বিদ্রোহী সেনাদল কর্তৃক হত্যার সংবাদ দেয়। মুজিব, তার স্ত্রী, তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূ এবং দুই ভাগ্নে নিহত হন। আমি আন্দাজ করতে পারি, এ সংবাদ ইন্দিরার ওপর কী প্রতিক্রিয়া করবে।
র’-এর তৎকালীন প্রধান রামেশ্বর নাথ কাও ১৯৭৪ সাল থেকে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তথ্য পেয়েছিলেন। তার (আর এন কাও) কাছে গোপন রিপোর্ট পৌঁছে যে, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ পাকিয়ে তোলা হচ্ছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এটা সম্পর্কে ইন্দিরা গান্ধীকে সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও দেন। পরে ইন্দিরা গান্ধী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মুজিবকে অবহিত করার জন্য তাকেই ঢাকায় পাঠান। ৩২ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় তার।
আর এন কাও-এর ভাষায়,—‘আমরা তখন বাগানের মধ্যে পায়চারি করছিলাম। আমি মুজিবকে বলি যে, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য আছে; কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) আনন্দিত ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার কিছুই হতে পারে না, তারা আমার লোক।’ এমনকি যদিও আমি সুনির্দিষ্ট তথ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তাকে দিয়েছি, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি।’
১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে কাওয়ের কাছে আরও বিস্তারিত খবর পৌঁছে যায়। সেটা হলো, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে মুজিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সংগঠিত হচ্ছে। ইন্দিরা দ্রুতবেগে মুজিবকে অবহিত করেন। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে অসম্মত হন। তিনি তো বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি তার আপন লোকজনের দ্বারা গুপ্তহত্যার শিকারে পরিণত হতে পারেন না। ‘র’-এর কাছে থাকা প্রতিবেদনগুলো ১৯৭৪ সালেও হালনাগাদ ছিল যে, বাইরের দেশের শক্তির মাধ্যমেই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর পাওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে লেখক পুপুল জয়কর লিখেছেন, ‘আমি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে তার (ইন্দিরা গান্ধী) বাসভবনে যাই। আমি দেখতে পাই, তিনি নিজেও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে মহাআতঙ্কিত। তিনি (ইন্দিরা) আমাকে বলেন যে, মুজিব হত্যা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের প্রথম ঘটনা। এটাই উপমহাদেশকে ডুবিয়ে দেবে। মুজিব ইতিমধ্যেই প্রস্থান করলেন। ইন্দিরা বিভিন্ন প্রমাণ ও যুক্তি দেখিয়ে বলেন, পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হবেন তিনি নিজেই। মুজিবের শিশু ছেলেকে হত্যার খবর সব ধরনের শুভ চিন্তাকে ধ্বংস করে দেয়। ভয় ভীতিগুলো প্রকট আকার ধারণ করে।
ইন্দিরা বলেন, ‘আমি গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো অগ্রাহ্য করেছি, কিন্তু তেমনটি আমি আর করতে পারি না।’ রাজীবের পুত্র রাহুল মুজিবের পুত্রের সম-বয়স্ক। আগামীকাল তারও এমনটি হতে পারে। তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে ধ্বংস করতে চায়।’ আত্মজীবনীর লেখক পুপুল জয়কর আরও লিখেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ইন্দিরার সঙ্গে মতবিনিময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আমার সঙ্গে যখন দেখা করেন তখনো তার দুই চোখ সবসময় সতর্ক থাকত।’
নিজের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস এতই দৃঢ় ছিল যে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন পূর্বাভাস পেয়েও তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘র’ এর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। ভারতীয় সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত তার মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র বইয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার আগাম পূর্বাভাসের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
`মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র` বইটির ৮০ নম্বর পাতায় সুখরঞ্জন দাশ লিখেছেন, ‘মুজিব খুন হয়ে যাওয়ার পর একটা প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে, একটা চক্রান্ত যে চলছে এ-কথা জানা সত্ত্বেও ভারত সরকার মুজিবকে বাঁচানোর জন্য কিছু করলো না কেন? সাতাত্তরের ত্রিশ নভেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে এক সাক্ষাৎকার-কালে আমিও এই প্রশ্নটাই তুলি তাঁর কাছে। শ্রীমতি গান্ধী আমাকে বলেন, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে আমরাও তা জানতাম। মুজিবকে আমি এ-সম্পর্কে বহুবার সতর্ক করে দেই। কিন্তু তিনি বরাবর আমাকে বুঝিয়েছেন, পাকিস্তানের জেল থেকেই যখন বেরিয়ে আসতে পেরেছি, নিজের দেশের জল্লাদকে নিশ্চয়ই এড়াতে পারব।’
বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করা প্রসঙ্গে সাবেক ‘র’- প্রধান রামেশ্বর নাথ কাও সানডের পত্রিকায় লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণনাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমরা আগাম তথ্য পেয়েছিলাম। আমি বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলি। তাঁকে আমরা বলি যে,এ সংক্রান্ত তথ্য অত্যন্ত সূক্ষ্ম সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি। এসব সূত্রের পরিচয় যেকোনো মূল্যে গোপন রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে আমি ঢাকা সফর করেছিলাম। শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার শেষ বৈঠকের এক পর্যায়ে আমি তাঁকে বঙ্গভবনের [সম্ভবত গণভবন] বাগানে একান্তে কিছু সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। সেখানে আমি তাঁর প্রাণনাশের আশঙ্কা নিয়ে আমাদের জানা তথ্য তাঁকে অবহিত করি। কিন্তু তিনি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বাহু দুলিয়ে বলেন,‘তারা আমার নিজের সন্তান, তারা আমার ক্ষতি করবে না’। আমি তাঁর সঙ্গে তর্কে যাইনি। শুধু এটুকু বলেছিলাম, এসব তথ্য নির্ভরযোগ্য এবং ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমরা যা জানতে পেরেছি তা আমরা তাঁকে অবহিত করব। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের মার্চে আমি আমাদের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এবং তাঁকে অবহিত করেছিলেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক ও অশ্বারোহী ইউনিট তাঁর প্রাণনাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত শেখ মুজিব এসব সতর্কতা অগ্রাহ্য করেছিলেন।
মার্কিন দলিলেও অভ্যুত্থানের আগাম তথ্য : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা বা বাংলাদেশে কোনো সেনা অভ্যুত্থান বিষয়ে ১৯৭৪ সালের শুরুর দিক থেকেই নানা ধরনের বার্তা চালাচালি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এবং ঢাকা, দিল্লি ও ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস।
সম্প্রতি উন্মোচন করে দেওয়া মার্কিন সিক্রেট বার্তাগুলোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, মুজিবের সেনা মোতায়েন শিরোনামে ১৯৭৪ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো বার্তার বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের বেসামরিক যোগাযোগ, দুর্নীতি, ভিন্নমতাবলম্বী উপদল, সেনা মোতায়েন। ’৭৪-এর ২ আগস্ট ঢাকা থেকে পাঠানো আরেক সিক্রেট বার্তার শিরোনাম ছিল ‘সম্ভাব্য সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে আরও বিস্তারিত’।
’৭৪-এর ২৯ আগস্ট ওয়াশিংটন থেকে ঢাকার পরিস্থিতি জানতে চেয়ে পাঠানো তার বার্তার শিরোনাম ছিল, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের অনুরোধ’। আবার ’৭৪-এর ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো আরেকটি গোপন বার্তার শিরোনাম ‘অস্থিরতার সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন।’ ‘মিসেস গান্ধী এবং সিআইএ’ শিরোনামে আরেকটি বার্তা পাঠানো হয় ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাইয়ে। এমন আরও বেশ কিছু তারবার্তা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো নিয়ে ঢাকার এক স্বনামখ্যাত সাংবাদিকের বইও প্রকাশ হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউএস ওরাল হিস্টোরি প্রোগ্রামের আওতায় চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডি নামের এক ইতিহাসবিদকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ১৯৭৫ সালে ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ ডেস্কের কর্মকর্তা স্টিফেন আইজেন ব্রাউন দাবি করেন, সম্ভাব্য সামরিক অভ্যুত্থান সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার দূতাবাস অবগত ছিল। এ কারণে তারা অভ্যুত্থানের খবর ও অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীদের বিষয়ে জেনে খুব একটা বিস্ময়বোধ করেননি।
যদিও এই সাক্ষাৎকারে ওয়াশিংটনে থাকা এই কর্মকর্তা দাবি করেন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে মার্কিন দূতাবাস সতর্ক করেছে এমন কোনো তথ্য বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন কোনো সহকর্মী শোনেননি। বরং সিআইএ এবং ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অনেক বেশি তথ্য থাকা সত্ত্বেও নীরবতা পালন করেছে। সিআইএর এই সম্পৃক্ততা ও নীরবতার তথ্য এসেছে পঁচাত্তরের ঘটনাবলি নিয়ে বাংলাদেশিদের একাধিক বইতে।

ও আই সি সম্মেলনে মুসলিম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা এবং অতঃপর

বঙ্গবন্ধুর প্রথম ও আই সি সম্মেলনে যোগ দেয়ার বিষয়টিও ইন্দিরা গান্ধী সহজ ভাবে গ্রহণ করেন নি।
অভিযোগ উঠেছিল যে শেখ মুজিব কেন ইন্দিরা গান্ধীর অনুমতি ছাড়া ইসলামিক কনফারেঞ্চে লাহোর সফর করেছিল এবং ঐ সম্মেলনেই জাতিরজনক বাংলাদেশকে ইসলামী রাস্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ডঃ কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম দের বঙ্গবন্ধু ডেকে বলেছিলেন- তোমরা জাতীয় সংবিধান লিখবে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ভুলে যাবে না।
আমরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ স্থাপন করলেও অন্যান্য ধর্মের সংখ্যালঘু ভাইয়েরাও যার যার ধর্ম তাদের ইচ্ছে মত, ধর্ম গ্রন্থানুযায়ী পালন করবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসে যতগুলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা নির্যাতন নিপীড়ন ঘর বাড়ী সম্পদ জমি জমা দখল করে ভিটে মাটি কেড়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করেছে; ঐ সকল সন্ত্রাসীদের আতি পরিচয় খুজলে দেখবেন বেশীর ভাগই স্বাধীনতা বিরোধী অন্যথায় উগ্রবাদী মৌলবাদী হিংস্র জানোয়ার।

Image result for বঙ্গবন্ধুর ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু একটি শান্তির নীড় হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
হয়নি; তিনি পারেন নি বহুমূখী সমস্যায় জর্জরিত যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ কে সমৃদ্ধ করতে। কারন আমাদের চরিত্র নৈতিক চরিত্র লোভ লালসা আমাদেরকেই পিছনে টেনে নিয়ে গিয়েছে।
যেমন এখন শেখ হাসিনার মন্ত্রী পরিষদের আ ক ম মোজাম্মেল হক সহ আব্দুস সোবহান গোলাপের মত লোভী দুর্নীতিপরায়ন নেতার কারনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দূরের কথা, শেখ হাসিনার ইচ্ছাগুলোই আজ ধূলায় লুন্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং হবে।
বঙ্গবন্ধু দয়ালু ছিলেন বেশী, কারো উপর রাগ করলেও কিছুক্ষন পরে বলতেন - ঐ কই সেই ঘুষখোর, তার অর্থ তিনি মাফ করে দিয়ে আবার খবর নিচ্ছেন।
শেখ হাসিনা ত নারী । অক্ষম অধম অসহায় এতিম বিধবা এক বিদুষী মহিয়সী নারী। বঙ্গবন্ধুকে ভয় পেতো না ভালোবাসার কারনে কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভয় করে এবং সে ভয়ের কারনেই কেউ শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে না। এ কথা সামনে বলবার কারো সাহস নেই। হুজুর হুজুর আপা আপা এবং অযাচিত প্রশংসা। কোন মতেই কেউ সত্য কথা বলার সৎ সাহস রাখেনা।
তাই শেখ হাসিনা ও মন্ত্রী পরিষদ এবং সাংসদ ও নেতাদের মধ্যে গণ ভবনের একটা বিশাল দূরত্ব লক্ষ করা যায়।

কেউ কথা রাখেনি - মোকতেল হোসেন মুক্তি

সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশে জাতিরজনককে দেশ গড়ার কাজে মাত্র সময় দেয়া হয়েছিল ৩ বছর  ৫ মাস। বঙ্গবন্ধু অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ দেশে সকল বাঙ্গালী উচ্চ শিক্ষা পাবে। গরীব দুখি অন্ন বস্ত্রহীন গৃহহীন চির দুখি বাঙ্গালী বাসস্থান পাবে। হাসবে খেলবে গাইবে । আর কোন ঘরে ভাতের অভাবে মা বাবা তাদের মেয়েদেরকে বিক্রয় করবে না। কোন কৃষক না খেয়ে থাকবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বলে উঠবে। বঙ্গবন্ধু সময় চেয়েছিলেন জাতির নিকট।

" আমি তোমাদের কিছুই দিতে পারবো না" আমাকে সময় দিতে হবে-কারো কোন দাবী করা চলবে না, যা' দেবো তাই ভাগ বাটোয়ারা করে অল্পতেই খুশি থাকতে হবে" যেমন তিন বাঙ্গালী জাতির জনক। একটি সংসারের বাবা যেমন নিজের পরিবারের সন্তানদের বলে থাকেন- বেশী দাবী করবো না, যা'দেবো তাই খেয়ে থাকবা, আগামী বছর ফসল হলে ভালো জামা কাপড় দেবো- মেয়ের বিয়ে দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি" 

মন্ত্রী পরিষদের কেউ কথা রাখেনি; কোন নেতা মহান স্বাধীনতার সংগঠক কেউ কথা রাখেনি কেবল জাতীয় ৪ নেতা কথা রাখতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন জেলের বদ্ধ প্রকোষ্ঠে। 

বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের বলতেন-আমি যতটা তোমাদের নিকট আশা করেছিলাম, তোমরা তার চেয়ে বেশী করে ফেলেছ, আমি তোমাদের নিকট চির ঋণী হয়ে থাকবো এ কারনে যে মাত্র ৯ মাসে তোমরা দেশ স্বাধীনই করোনি আমাকে পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি করার পথ কুসুমাস্তীর্ণ করে দিয়েছ। তোমাদেরকেও বলি- আমায় সময় দিতে হবে- সকলে অস্ত্র জমা দাও, নিজের পূর্বের যার যার পেশায় ফিরে যাও, আত্মীয় পরিজন মা বাবা ভাই বোন ও নিজের সন্তানদের নিয়ে কিভাবে বেচে থাকা যায় সেদিকে মনোনিবেশ করো" 

সবাই কথা দিয়েছিল। কেউ কথা রাখেনি। কোন কোন কমান্ডার নিজের অস্ত্রের বলে ক্ষমতার বলে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরীকরে কামিয়ে নিয়েছে লক্ষ কোটি টাকা। কেউ কেউ করেছে ডাকাতি; কেউ কেউ করেছে লুটপাট এবং এদের পিছনের শক্তি ছিল ঐ সময়ের অনেক ছাত্র নেতা আওয়ামী লীগ নেতা সাংসদ এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারগণ। 

১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। বাস বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে চির তরে ধংস করার পথ খুজে পেল বাংলার গ্রামে গঞ্জে এখানে সেখানে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীশক্তি। অন্যদিকে পাকিস্তান আই এস আইও গোপন চক্রান্তের ফাঁদে ফেলার অভিসন্ধিতে সফল হল। পেয়ে গেল খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, তাহের উদ্দিন ঠাকুর কে এম ওবায়দুর রহমান এবং অস্ত্রধারী খুনি মেজর জিয়াউর রহমানকে।