Saturday, November 11, 2017

শেখ মুজিবের ছাত্রজীবন আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতিকৃতি।


শেখ মুজিবের ছাত্রজীবন
আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতিকৃতি। 
শেখ মুজিবের ছাত্রজীবন : আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতিকৃতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালির জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠা। শৈশব কৈশোর থেকে তিনি এই আদর্শ নিয়েই বড় হয়ে ওঠেন। নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করে তোলেন। তাঁর এই চারিত্রিক দৃঢ়তার পেছনে ছিল গভীর অধ্যয়ন, জানা-চেনা-শোনা ও দেখার গভীর অন্তর্দৃষ্টি। তিনি হৃদয়ের আবেগকে যথেষ্টভাবে ধারণ করতে সমর্থ হন। এর পেছনে ছিল মানুষকে ভালোবাসা ও সাহায্য করার জন্য তাঁর দরদী মন। এই শিক্ষাটা তিনি অর্জন করেন তাঁর পরিবারের মানুষদের দেখে, তাঁর গৃহশিক্ষকের কাছে এবং দারিদ্র অভাবগ্রস্থ গ্রামের মানুষকে দেখে। তাঁর হৃদয়ে যা কিছু ছাপ রেখেছে বা প্রভাব ফেলেছে সেটা তিনি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। এই ক্ষমতা অল্প বয়স থেকেই তাঁর আয়ত্তে ছিল। তাঁকে চিন্তাচ্ছন্ন করে তুলতো, তাঁকে আবেগতাড়িত করতো। তাঁর জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর গ্রাম টুঙ্গিপাড়ার মানুষের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই ছোট্ট অনুন্নত গ্রাম ও মানুষের মধ্যে তিনি লক্ষাধিক গ্রাম ও কয়েক কোটি মানুষকেও দেখেছেন। আর সেজন্যই বাঙালি জাতির ভাগ্যকে তিনি জয় করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযোগ পান নি। জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসকগোষ্টীর অত্যাচার– সবকিছু সহ্য করেছেন। কিন্তু বাংলার মানুষের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল বাংলার মানুষের মুক্তি। বাঙালি উন্নত জীবনের অধিকারী হোক। বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়াক। বাঙালি জাতিসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করুক। একজন মহান নেতা হবার সবকটি গুণই আমরা তার মধ্যে খুঁজে পাই। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের জন্ম হয়। মা-বাবার চোখের মণি, ভাই-বোনের আদর ভালোবাসা, আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি সকলের কাছেই ছিল তার সমাদর। গ্রামের মাটি-আলো-বাতাসের স্পর্শ নিয়ে প্রকৃতির শান্ত শীতল সবুজ ছবিটি দেখে তিনি বড় হয়ে উঠলেন।
গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করেন। বাড়িতে লেখাপড়ার জন্য শিক্ষক, মৌলভী ও পণ্ডিত ছিলেন। গ্রাম থেকে গোপালগঞ্জ শহরে এসে মিশন স্কুলে ভর্তি হন। পিতা ছিলেন গোপালগঞ্জ দেওয়ানী কোর্টের সেরেস্তাদার। স্কুল ছাত্রজীবনেই তাঁর চোখে বেরিবেরি রোগ হওয়ায় কলকাতায় গিয়ে ডা. টি. আহমদের কাছে অস্ত্রপচার করতে হয়। দুই বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিল। এ সময়টায় তিনি ঘুরে বেড়াতেন, সভায় গিয়ে বক্তৃতা শুনতেন, গৃহশিক্ষকের কাছে অনেক কথা কাহিনী ও খবরাখবর শুনতেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার স্কুলে ভর্তি হন, খেলাধুলায়ও মনোযোগী হন। ফুটবল ছিল প্রিয়। স্কুলের দলের হয়ে খেলতেন। লেখাপড়া করতেন ঠিক মত, কেননা তাঁর মা-বাবার প্রচন্ড উৎসাহ ছিল এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল, শাসনও ছিল। তাঁর গৃহশিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ ছিলেন একজন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মী যিনি আত্মগোপন করতে তাদের বাসায় আশ্রয় নেন। সেই শিক্ষকই শেখ মুজিবের জীবনকে আলোকিত করার প্রথম প্রদীপটি জ্বালান। তিনি তাঁকে ইতিহাসের শাসকদের গল্প শোনান। বিপ্লব-বিদ্রোহের কাহিনী শোনান। বাংলার ইতিহাস কিশোর মুজিবের কাছে ছিল এক আদর্শময় পাঠ। বাঙালির কৃতিত্ব, শিল্প–সাহিত্য-সংস্কৃতির জ্ঞানও তিনি ধীরে ধীরে গ্রহণ করেন। এই শিক্ষা গ্রহণ করার পাশাপাশি সেই সময়ের বৃটিশ শাসকদের শাসন ও শোষণ, গান্ধিজীর আন্দোলন, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, রাজনৈতিক আন্দোলন, সামাজিক সমস্যাবলী, বন্যা-দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাব – সবই তিনি তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। স্কুল ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যারা রাজনীতি করতেন তাদের খুব কাছাকাছি চলে যান। ঐ সময়ে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক ও মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সফরে এলে তিনি তাঁদের সামনে গিয়ে স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার অভিযোগ তুলে ধরেন এবং মেরামতের দাবি জানান। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি দেখে দুই নেতাই মুগ্ধ হন। সোহরাওয়ার্দী তাঁকে কাছে ডেকে কথা বলেন এবং এলাকার রাজনৈতিক খবরাখবর নেন। তিনি ঠিকানা দিয়ে চিঠি লিখতেও বলেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে সেই প্রথম সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা আজীবন ছিল। সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক আদর্শ শিষ্য হিসেবে শেখ মুজিব গড়ে উঠতে থাকেন। সেই সফরে সম্বর্ধনা জানাতে একটি কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে সেই কমিটির একটি গোলমালের ঘটনায় শেখ মুজিবসহ চার পাঁচজনকে আসামী করে বিরোধীরা থানায় একটি মামলা করে। গোপালগঞ্জ থানা হাজতে সাতদিন বন্দি থেকে জামিনে মুক্তিলাভ করেন। পরবর্তীতে ১৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিলে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
সেই তাঁর প্রথম কারাজীবন এবং এটাও তাঁর জীবনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স পাশ করে শেখ মুজিব কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। বৃটিশ শাসিত দুই বাংলা একত্রে বাংলা বা বেঙ্গল হিসেবে পরিচিত ছিল। বাংলার মেধাবী, মননশীল ছাত্ররা ইসলামিয়া কলেজে লেখাপড়া করতো এবং বেকার হোস্টেলে থাকতো। ১৯২৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে এর নামকরণ হয় সেন্ট্রাল কলকাতা কলেজ। ১৯৬০ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নামে রাখা হয়। বর্তমানে মাওলানা আজাদ কলেজ নামে পরিচিত। শেখ মুজিব এখান থেকে ১৯৪৪ সালে আই.এ. এবং ১৯৪৭ সালে বি.এ. পাশ করেন। কলেজের পাশের রাস্তায় তালতলা থানার কাছেই বেকার হোস্টেল। তিনতলা বিরাট ভবন। শেখ মুজিব তিনতলার বাঁদিকের সামনের সারির কোনায় ২৪নং কক্ষে থাকতেন। ছোট্ট কক্ষ, কোন ফ্যান ছিল না তখন। একটি ছোট্ট খাট। পাশেই কাঠের তৈরি পড়ার টেবিল ও চেয়ার। একটি ছোট্ট আলমারীও আছে। বর্তমানে এটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ নামে পরিচিত। তাঁর ছবি ও তাঁর সম্পর্কিত লেখা বইয়ের একটি আলমারিও আছে। পাশের ২৫ নম্বর কক্ষটিও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। দরোজার পাশে দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনীও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এই দুটি কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সঙ্গীসাথীরাও থাকতেন। সারাদেশ থেকে তাঁর ছাত্র রাজনীতির কর্মী, ভক্ত ও অনুরাগীরা এসে দেখা করতো এখানেই। অনেক সভা করেছেন হোস্টেলে। হোস্টেল সুপার ছিলেন অধ্যাপক সাঈদুর রহমান। ছাত্র-কর্মীদের থাকার জন্য শেখ মুজিব খালি রুম বা বড় হলঘর চাইলেই তিনি কখনও না করতেন না। শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর একটা আলাদা স্নেহ-ভালোবাসা ছিল। ইসলামিয়া কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন ড. এইচ. আর. জুবিরী। 
শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর ছিল অপার স্নেহ। বিশেষ করে বি.এ. পরীক্ষায় বসার জন্য তিনি তাঁকে সবরকম সহযোগিতা করেছিলেন। কেননা দাঙ্গা-হাঙ্গামা, পুনর্বাসন ইত্যাদি কর্মকান্ডে শেখ মুজিব তখন ব্যস্ত থাকতেন। মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। একদিকে ছাত্রনেতা হিসেবে বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন, অপরদিকে মুসলিম লীগের ড্রইংরুম রাজনীতিকে সাধারণের মাঝে নিয়ে আসার কাজে তিনি সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের যোগ্য শিষ্য ছিলেন। বেকার হোস্টেলের ছাত্র সংসদের নেতৃত্বও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং একবার সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। শিক্ষক ও ছাত্র সকলের প্রিয় ছিলেন শেখ মুজিব। তাঁর আদর্শ, সাহস ও চিন্তা-ভাবনার প্রতি সকলের শ্রদ্ধা ছিল। স্কুল ছাত্রজীবন থেকেই শেখ মুজিব দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে মুসলিম লীগের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সিরাজগঞ্জে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্মেলনে যোগদান করে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ ভারতের বড় বড় নেতৃবৃন্দ যোগদান করেন। এছাড়াও দিল্লীতে ভারতীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্মেলনে তিনি দুইবার যোগদান করেন। 

সেখানেও নেতাদের ভাষণ শুনে তিনি অনুপ্রাণিত হন। কলকাতায় ছাত্রাবস্থায় তিনি দাঙ্গা দেখেছেন ও রুখেছেন। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তাঁর ভূমিকা ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেম ও দেশের জন্য কাজ করা তাঁর স্বভাবের অংশ হয়ে ওঠে। ছাত্রজীবনে তাঁর কর্মকাণ্ড, বিচক্ষণতা ও ভাষণ শুনে সবাই আকৃষ্ট হতো। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে শেখ মুজিব ঢাকায় এসে ১৪০নং মোগলটুলীর ‘কর্মী-ক্যাম্পে’ ওঠেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সলিমুল্লাহ হলে মাঝে মাঝে থাকতেন। 
ঢাকায় এসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসলিম ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাচারিতা ও বাংলা বিরোধী ভূমিকার জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। তিনি পূর্ব বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন। যুবলীগেরও একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। খাজা নাজিমুদ্দিনের বাংলাভাষাবিরোধী ভূমিকা এবং উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার হুমকির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ যখন গর্জে ওঠে, তিনিও তাদের সঙ্গে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রতিবাদ ও হরতাল পালিত হলে শেখ মুজিবও সবার সঙ্গে গ্রেফতার হন। পরে পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে সবাইকে মুক্তি দেন। এরপর শেখ মুজিব কৃষকদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেন। এসময় উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও কালে তাঁকেও পুলিশ গ্রেফতার করে এবং অনেকগুলো মামলা দায়ের করে। কারাগারে থাকার সময় তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেল থেকে বের হয়ে এক ছাত্রসভায় বক্তৃতা দিয়ে তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেন এবং জাতীয় রাজনীতিতে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বহিস্কার করা হয়েছিল। জেলে থাকাকালে সরকার তাঁকে জরিমানা ও মুচলেকার প্রস্তাব দেয় এবং জানায় তিনি যদি রাজনীতি না করেন, তাহলে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। তিনি সরকারি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলেন। 
কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান তাঁকে লন্ডনে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়তে বলেন। কিন্তু শেখ মুজিব ততদিনে পাকিস্তানের শাসকদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে অনুধাবন করে ফেলেন। তিনি তাঁর প্রিয় বাংলার জনগণকে পাকিস্তানের শোষণের মধ্যে ফেলে রেখে লন্ডনে গিয়ে আর পড়তে চাইলেন না। তিনি রাজনীতি করার সদিচ্ছা প্রকাশ করে বাংলার মানুষের আদায়ের দাবিতে আবার ঢাকা চলে এলেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে। কিন্তু ঘরে বসে বই পড়ার অভ্যাস থাকায় তিনি একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। স্বচ্ছ মনের মানুষ ছিলেন, রাজনৈতিক চিন্তার দিক থেকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন, সাহসী, সৎ ও দৃঢ় চারিত্রিক আদর্শের অধিকারী ছিলেন।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আতঙ্ক ছিলেন একমাত্র শেখ মুজিব। মন্ত্রীত্বের লোভ, লাইসেন্সের টোপ এবং ব্যবসা-বানিজ্যের নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে তখন অনেক নেতাকে ক্রয় করা যেত। কিন্তু শেখ মুজিব তাঁর লক্ষ্যে দৃঢ় ছিলেন। জেল-জুলুম মামলা–ফাঁসির ভয় তাঁর মাথা নত করতে দেয়নি। বাংলার মানুষের মুক্তির দাবিতে, অধিকার আদায়ে, শোষণের বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন সোচ্চার প্রতিবাদী। তাঁর বজ্রকন্ঠ পাকিস্তানের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। দেশ ও মানুষকে তিনি তাঁর হৃদয়ের আধেয় করে একজন আত্মত্যাগী দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। ছাত্রজীবন থেকে যে শিক্ষা ও দীক্ষা তাঁর জীবনকে আলোকিত করে তোলে, তার শিখা চিরন্তন করে রেখে গেছেন তিনি।

Monday, October 23, 2017

জাতিরজনকের আদর্শ নিয়ে ব্যবসা করেন?


যে সকল লোভী দুর্নীতি পরায়ন নেতা মন্ত্রী জাতিরজনকের আদর্শ নীতি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উদ্দেশ্যকে গলা টিপে হত্যা করছে; সে সকল হায়েনা মুক্তিযোদ্ধা নামের দস্যুদের হত্যা করুন; এরা শেখ হাসিনাকেও একদিন ১৫ই আগষ্টের মত মিথ্যা বানোয়াট দুর্ভিক্ষ দেখিয়ে হত্যা করে ক্ষমতার মসনদে বসবে; এরাই একদিন খুনি জিয়ার কামানের উপর দাঁড়িয়ে লুঙ্গি ড্যান্স দিবে; এরাই একদিন বংগভবনে খন্দকার মোস্তাকদের সাথে মিষ্টি বিতরন করবে; এরাই একদিন বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চাইবে; এদের এখনি হত্যা করুন;

আকম মোজাম্মেল হক সাহেব জাতিরজনকের আদর্শ নিয়ে ব্যবসা করেন? মিথ্যার বেসাতি দিয়ে আওয়ামী লীগকে কলুষিত করেন? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে রঙ তামাশা করেন? আপনার চরিত্র জাতি জেনে গেছে। নিজেকে সামাল দিন; জনতার রায় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর নাম বিক্রয় করে আর কত দিন? জাতিরজনকের আদর্শ নিয়ে ব্যবসা করেন? বঙ্গবন্ধুর নাম আদর্শ নীতি চেতনা আত্মজীবনী ইত্যাদিকে সম্বল করে আজ দুপয়সা কামিয়ে নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য বলি; ভাই এ দিন দিন নয়; আরো দিন আসিবে; সেদিন যেনো ভোটের জন্য আমাদের হাতে পায়ে না ধরেন। নির্বাসিত নায়ক নির্বাসিত নায়ক মোজাম্মেল হক সাহেব, মুক্তির কয়টি ফেসবুক টুইটর গুগল ইয়াহু ব্লগ ওয়েবসাইট হ্যাক করবেন বা বন্ধ করবেন? বন্ধ করতে হলে মুক্তিকেই চির তরে বন্ধ করে দিতে হবে। বাপের ব্যাটা হলে সেটা করে দেখান। নইলে পদত্যাগ করেন। 


একজন প্রকৃত বন্ধু কোন দিনই আর একজন বন্ধুর সব কথা ও কাজের প্রশংসা করবে না; যারা করে তারা চাটুকর; আজকের আওয়ামি লীগের জন্য চাটুকরের কোন কমতি নেই। ভালোরা দূরে থাকুন সেটাই আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে; এই প্রত্যাশা আওয়ামী লীগকে ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়েও যেতে পারে। সেদিনও বাকশাল গঠনের নামে মোস্তাক শাহ মোয়াজ্জেম তাহের উদ্দিন ঠাকুন নুরুল ইসলাম, চাষী মাহবুবুল আলমের গল এভাবেই বঙ্গবন্ধুর পা'চাটতে শুরু করেছিল। একমাত্র বংগতাজ তাজুদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানই পা'চাটতে জানতেন না।

নীতির সাথে আপোষ হয়না-জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু 

the policy doesn't compromise=father of nation bangabandhu that's all my dear friends, no compromise with a k m mozammel haque what ever will happen, i damn care! 65 years old freedom fighter never thinking when he have to be expired.
ইতিহাস কাউকে ক্ষমতা করে না। অতীতের সকল ভুল ভ্রান্তি থেকে আওয়ামী লীগকে শিক্ষা নিতে হবে। নইলে আফসোসের সময় থাকবে না।আ ক ম মোজাম্মেল হকের একশন শুরু হয়ে গেছে। আমার সব গ্রুপ ও পেজ ব্লক করা হয়েছে অফিসিয়াল্লি।
গুড এটাইত চেয়েছিলামকেউ অগণতান্ত্রিক পন্থায় নিজের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করলে; আমরাও মাইক বাজিয়ে প্রচার করতে জানি; মন্ত্রী মহোদয়! ফেসবুক আ ক ম মোজাম্মেল হকের ১৪ পুরুষের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় আর ফেসবুক আমার প্রতিদিনের বাজার করে দেয়না ফেসবুক চালাইতেই হবে এমন কোন চুক্তিত হয়নি কারো সাথে? তবে একশন শুরু হলে-মুক্তি ছাড়াও বহু আইডি রয়েছে










Monday, June 26, 2017

মুক্তির ফরিয়াদ

মো: মাহমুদ হাসান ঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তি ১৭ই মে ২০১৭ বিকাল ৩.৪৫ এ 

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এবং “কালকিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি” বরাবরে আবেদন করে যে ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন, তা হুবহু নিচে উল্লেখ করা হলো: বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাস: মাননীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রী মহোদয়, আপনি মাদারীপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্বে এবং কালকিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি। আপনার নিজের অবস্থান, আপনার মান-সন্মান, মর্যাদা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদান থেকে আমরা শিখেছি। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে আপনাদের শিখানো শ্লোগানে মূখরিত করেছি আমরা। আপনাদের প্রেরণা ও উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি আমরা। কেউ আপনার আত্মীয় নয়; কেউ আপনার পর নয়; সবাই আপনার নিকট সমান। আপনি আমাদের নেতা। আপনাকে আমরা মাদারীপুরবাসী আমাদের যোগ্য প্রতিনিধি, যোগ্য নেতা বলে শ্রদ্ধা করি, সন্মান করি; মিছিল করি, উল্লাস করি; আপনার আগমনে কালকিনি তে নব জোয়ার এসেছে। প্লিজ, ভারতে প্রশিক্ষণ দেয়া অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় নেই এবং এ মহান দায়িত্ব আপনার উপর। আপনি অন্যায় অবিচার করলে আমরা আর কার নিকট যাবো? সবাইতো আর নেত্রীর সাথে দেখা করতে পারেন না। আজ যারা কালকিনিতে কমান্ডার বলে খ্যাত, এদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা নয়; এমন কি আমার ইউনিয়ন বাঁশগাড়ীর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আমার চেয়ে তো অন্য কেউ বেশী চিনে না, জানে না; এখানে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এমন কি ব্যারাকপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ কালীন কমান্ডার হানিফ মাহমুদ (নিউজিল্যান্ড প্রবাসী) এর নামও তালিকায় নেই, যিনি চাঁদপাড়া রিসিপশন ক্যাম্পের সহকারী ইন-চার্জ ছিলেন। হায়দার বেপারী, যিনি স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং ৭১ সালে চাঁদপাড়া ক্যাম্পের ইন-চার্জ মাদারীপুর-কালকিনি-৩ আসনের প্রথম এম পি (এম সি এ) বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডঃ মতিউর রহমান (মতিভাই)র সাথে তাঁর বাসায় থাকতেন এবং ক্যাম্প অফিসের কাজ করতেন। তার দরখাস্তও আপনি গ্রহণ করেননি; বড় কষ্ট পেয়েছি; যারা মুক্তিযোদ্ধা নয়; তাদের সাথে আপনি হেসে কথা বললেন-গল্প করলেন, তাদের কাগজপত্র স্বাক্ষর করলেন আর যে আসল মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন; সে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেল; এ দুঃখজনক ঘটনা আপনার দ্বারা সংঘটিত হওয়ায় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম এবং লাল বইতে আমার নাম না থাকা সত্বেও আমি কথা বলেছিলাম।
ওদের সমর্থন করেছিলাম, আপনার মনে আছে হয়তো। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করেছে এবং এখনো করছে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা পাবে, তাও আবার আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাকালীন এবং আপনার মত মাদারীপুর কাঁপানো আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সামান্য ভুলের কারনে? এটা ঠিক কিনা? আপনি নিজেই অনুধাবন করুন। আমরা আপনার সুবিবেচনা ও সুবিচারের প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে বসে থাকলাম তাছাড়া আঞ্চলিক সমস্যাগুলো নেত্রী সরাসরি না জেনে কিভাবে সমাধান করবেন? এ মহৎ কাজটি আপনাকেই করতে হবে। ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া আমার সহযোদ্ধা অনেকেই আর বেঁচে নেই; তাদের পরিবার বঞ্চিত হল মহান স্বাধীনতার ফসল থেকে। এ কাজ যারা করেছে, তারা তাদের ইচ্ছে মত অর্থ নিয়ে ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় লিখে দিয়েছে। যে সমস্যা মাদারীপুরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কলুষিত করছে, সে সমস্যা কেন্দ্রীয়ভাবে সমাধান হবার নয়; যার যার জেলা উপজেলায়ই সমাধানযোগ্য। আমার মুক্তিযোদ্ধা হবার সখ মিটে গেছে, কিন্তু ঐ হতভাগাদের কি হবে? যারা ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের নাম মূখে আনেনি, তারা ভাতা পাচ্ছে, তাদের সংসার ভালো চলছে, আর যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে গেল, যুদ্ধ করলো তাদের নাম নেই; এ কলঙ্ক এ ব্যর্থতা যে কোনভাবেই হোক আওয়ামী লীগ সরকারের এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উপরই বর্তায়। কারন, আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেছিল। আপনি আমাদের শেষ ভরসা-আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা হবে। মহান আল্লাহ্‌ যেনো আপনার দ্বারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কলঙ্ক দিয়ে আপনার বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন সহযোগি, আওয়ামী লীগের সংগঠক ও দুর্দিনের কান্ডারী মরহুম এডঃ আচমত আলী খানের সারা জীবনের কষ্ট, সাধনা, সাফল্য কলঙ্কিত না করে সে দোয়া করি; আপনি আরো উপরে যান; আল্লাহ্‌ আপনাকে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিতকরনে সহযোগিতা করুক। আমিন ! 

 আমার নিজস্ব অভিমত: 
একটা জাতি কতটুকু দুর্ভাগা হলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সকল আবেদন, নিবেদন ব্যর্থ হওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি বরাবরে আবেদন করতে হয়, এটা ভাবতে গেলে গা শিউরে ওঠে। ইচ্ছে হয়, রাষ্ট্রের কর্ণধারদের টুঁটি চেপে ধরে রাস্তায় টেনে এনে মিশিয়ে দেই ধুলোর সাথে; কিন্তু, বাস্তবে তা সম্ভব নয়। নষ্ট পূঁজিবাদী একটি রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে এখন টিটকারি, লাঞ্চনা-গঞ্জনা সইতে হয়, যদিও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, কিছু রায়ও হয়েছে, কিছু রায় কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আদৌ কোথাও সন্মানিত হচ্ছে কি, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় একটি মরণোত্তর রাষ্ট্রিয় গার্ড অব অনার পাওয়া ছাড়া, আমার জানা নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নয়, অথবা কোন আমলা নয় এমন সাধারন মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে আজ পর্যন্ত্য রাষ্ট্রের কোন একটি স্থাপনার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন বা উদ্বোধন করানোর মাধ্যমে সন্মান জানানো হয়েছে কি? ব্যক্তি বা সমাজের কিছু লোকের উদ্যোগে কোন মুক্তিযোদ্ধার নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোন লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হলে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে আলাদাভাবে একটু বেশি সুবিধা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মানিত করার কোন অনুরোধ কোন মহল থেকে করা হলেও মি. বিধি-বিধানের অদৃশ্য সূতোর টানে প্রতিষ্ঠানটিই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে এ নজির বহু আছে, ফরিদপুর অঞ্চলে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কথা এ মূহুর্তে মনে পড়ছে, “মৃগী শহীদ দিয়ানত কলেজ”; যেটির অস্তিত্ব সঙ্কটকালে সে সময়কার কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা হিসেবে কিছুটা সহায়তা করেছিলাম, ছাত্র জীবনের বন্ধু তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষের কাছে সব জেনে।
মাদারীপুর জেলার (সাবেক ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার) কালকিনি উপজেলার (সাবেক কালকিনি থানার) বীর মুক্তিযোদ্ধা মালদ্বীপ প্রবাসী “মোক্তেল হোসেন মুক্তি”র গত কয়েকদিনের কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্র কত হীনভাবে অপমান করছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ওনার কিছু স্ট্যাটাস এতোই হৃদয়বিদারক যে, তা জনসমক্ষে প্রকাশযোগ্য নয়, তরুণরা ক্ষিপ্ত হয়ে এসবের কুশীলব নষ্টদের মান-সন্মানে আঘাত করে বসতে পারে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের আগে অনেক কিছুই জনাতাম; অধিকাংশই সমাধান না হলেও, কিছু হতো। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, ততই হতাশ হয়ে পড়ছি। এক কুখ্যাত রাজাকার পুত্রের অনুরোধে আমার খুব কাছে থেকে দেখা এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ না দিতে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র উন্মুখ হয়ে লড়েছে, দেখেছি চোখে ঠুলি পরে। যদিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যারা এ পর্যন্ত্য দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলেই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু, এসব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমলেই অনেক কুখ্যাত রাজাকার ও রাজাকার পুত্ররা “মুক্তিযোদ্ধা সনদ” পেয়ে গেছেন অনেক চুপিসারে বিদ্যুৎ গতিতে, রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্ণধারেরা নিজেরাই এদের ফাইল বগলদাবা করে নিয়ে ছুটেছেন এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে। কিন্তু, “মুক্তিযোদ্ধা সনদ” পেতে বয়োবৃদ্ধ, রোগে শোকে কাতর, অনাহারে-অর্ধাহারে জর্জরিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে তার সনদ পেতে ঘুরতে ঘুরতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়েছে, ঘাটে ঘাটে (দপ্তরে, দপ্তরে, টেবিলে টেবিলে) তাকে ষ্টেটম্যান্ট দিতে হয়েছে যেমনটি দিতে হয় একজন দাগী আসামীর “জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল” এর সন্মূখীন হয়ে অপরাধ স্বীকার না করার চেষ্টাকালে। আর এসব মুক্তিযোদ্ধাকে এসব দপ্তরে কখনো সন্মানের সাথে একটু বসতে বলা হয়েছে, এমন কখনো শুনিনি। গত কয়েক মাস যাবৎ শুরু হয়েছে আরেক তেলেসমাতি কান্ড-কারখানা “মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি”র সন্মূখে আবেদনটি পৌছাতে নাকি টাকা দিতে হয়, হরহামেশাই এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলিতে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে তথ্যটি আসছে পত্রিকায় কিছু উপজেলায় নাকি “মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি”তে অর্ন্তভূক্ত হয়ে আছেন কুখ্যাত রাজাকারও। উল্লেখিত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির আরো কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিছু হৃদয় বিদারক হাহাকার ও ক্ষোভ ঝরে পড়েছে, যেগুলির সারমর্ম হলো, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্রের সাথে ন্যাক্কারজনকভাবে জড়িত পবিত্র সংসদ ভবনে চিৎকার করে খুনী কনফেডারেশন জিয়াকে “বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক” দাবী করা সুবিদ আলী ভূইয়ার ইন্ধনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মন্ত্রীর কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব লাঞ্চিত করেছেন। এটা জাতির জন্য উদ্বেগজনক, খোন্দকার মোশতাকের উকিল জামাই সুবিদ আলী যখন গোটা জাতির ধিক্কার ও ঘৃণায় লুকিয়ে থাকে, তখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর কক্ষে সে ঢোকে কি করে? নাকি মাননীয় মন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের কথা শোনেননি? তিনি কি শোনেননি জঙ্গিদের মদদদাতাদের কথা যারা আজ বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে? মাননীয় মন্ত্রী কি শোনেননি কে, এম ওবায়দুর রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেমদের নাম, বা জানেন না এদের পূর্ব পরিচয়? তিনি তো দুধের শিশু নন। মাননীয় মন্ত্রী নিজে শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা শুধু নন, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রকাশ্য ও গোপন প্রস্তুতির সংগঠকও। পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি যুদ্ধ শুরু করার বেশ আগেই যে তিনি একটি অতি সাহসী বীরত্বসূচক কাজ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি কি সেটা ভূলে গেছেন?
মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাোম্মেল হক এর দৈনিক ভোরের কাগজ ১৯ মার্চ, ২০১৬ তে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ ১৯শে মার্চ ১৯৭১” শিরোনামের একটা লেখায় উল্লেখ রয়েছে, ৭ মার্চে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্ভবত ১১ মার্চ গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা (অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি) আক্রমণ করি। গেটে বাধা দিলে আমি হাজার হাজার মানুষের সামনে টেবিলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি মাইকে। পাকিস্তানিদের বুঝতে পারার জন্য ইংরেজিতে বলি ‘I do hereby dismiss Brigadier Karimullah from the directorship of Pakistan Ordnance Factory and do hereby appoint Administrative officer Mr Abudul Qader (বাঙ্গালী) as the director of the ordnance Factory’ এ গর্জনে সত্যি কাজ হয়েছিল। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার বক্তৃতা চলার সময়ই পেছনের গেইট দিয়ে সালনা হয়ে পালিয়ে ঢাকা চলে আসেন। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার আর পরবর্তী সময় ১৫ এপ্রিলের আগে গাজীপুরে যায়নি। পাকিস্তান সমরাস্ত্র কারখানা ২৭ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দখলেই ছিল। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে বিনীতভাবে জিগ্যেস করতে চাই, এমন সাহসী ভূমিকা কি ১১ই মার্চ ১৯৭১ এ কি আপনার একাই ছিলো, নাকি মোক্তেল হোসেন মুক্তিদের মতো সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরই ছিলো? কিভাবে ২০১৬ সালে পাকিস্তানের এজেন্ট খুনী জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবীকারি সুবিদ আলী আপনার উপস্থিতিতে আপনার কক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তিকে অপমান করার ঔদ্ধত্য দেখায়? আর সচিব কি প্রজাতন্ত্রের মালিক না কর্মচারি না সেবক? আপনি সচিবের অধীন, নাকি সচিব আপনার অধীন? এসব প্রশ্নগুলি নিজের বিবেককে করুন মাননীয় মন্ত্রী। দেশবাসীর বিবেক জাগ্রত হোক: আমি দেশবাসী, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণদের বিবেকের উদ্দেশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তির দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস উল্লেখ করতে চাই। সাথে এও বলতে চাই, যদি উনি মুক্তিযোদ্ধা নাই হবেন, তবে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে এ দাবীটি তুলতে পারতেন না। যারা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তারা এ সনদ পায় গোপনে টাকার থলি দিয়ে কিনে আর এ সনদ ব্যবহার করে টাকার বস্তা কামায়। তাই, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, উনি আসলেই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার হাহাকার আমার কাছে আজ পঙ্গু হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌরসভায় ভাড়া বাসায় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ১৯৭২ সালে সনদ পেয়েও ১৯৭৪ সালে ছিড়ে ফেলার পর বারবার চেষ্টা করেও নতুন সনদ না পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম এর হাহাকারের মতোই মনে হয়েছে। মোক্তেল হোসেন মুক্তির ১৭.৫.২০১৭ তারিখ বিকাল ২.৩৮ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস: “আমাকে আমার মাওলা ছাড়া আর আমার মা বাবা ছাড়া কেউ বোঝেনি, কেউ না। আমার চেয়ে দলকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধ কে কারা কিভাবে বেশী ভালোবাসতে পারে আমার জানা নেই। আমার অস্তিত্ব না থাকলে আমি কারো অস্তিত্ব নিয়ে ভাববো কেন? এখানে ক্ষমার প্রশ্ন নয়; এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রশ্ন। যে মেজর সুবিদ আলী ভুঁইয়া বলতে পারে যে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক সে সুবিদ আলীর কথায় মন্ত্রী আমাকে অপমান করতে পারে না। আমার গান হাতে থাকলে ঐ খানেই কিসসা খতম করে দিতাম সুবিদ আলীর। আমি আর মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই না। এবার হবো সন্ত্রাসী। মরার আগে যে ক’দিন বাচি, আওয়ামী লীগের সবাই যেনো আমাকে জুতা মারে, থু থু নিক্ষেপ করে এবং শেষ শব্দটি উচ্চারন যে
"Moktel Hossain Mukthi was a great rajakar in 1971.” মোক্তেল হোসেন মুক্তির ১৭.৫.২০১৭ তারিখ বিকাল ২.০৫ এর ফেসবুক স্ট্যাটাস: সবাই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে গবেষনা করে। কেউ কেউ নাম ভাঙ্গিয়ে খায়, ব্যবসা করে; বড় বড় লম্বা বক্তৃতায় মাইক ফাটিয়ে দেয়; অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সারা দেশে অবৈধ ব্যবসা চলছে; মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব মারধর করছে, মন্ত্রী অপমান করছে, তার কোন প্রতিবাদ হয় না; কার চরিত্র ভালো? ফেসবুকের চরিত্র আরও জঘন্য; আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগি অনলাইনের সে সোনার ছেলেরা কোথায়? আজ গা' জ্বলে না? আপনার বাবা যদি মুক্তিযোদ্ধা হত, আর মন্ত্রী অপমান করতো আপনি কি করতেন? আমার কোন ছেলে নেই, তাই কেউ আমার পাশে এসে দাড়ালেন না? ভালো থাকুন সবাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে সিংগাপোর মালদ্বীপ থাইল্যান্ড সহ ইউরোপের দেশগুলোর সাথে কি সম্পর্ক রয়েছে? আ ক ম মোজাম্মেল হক কোন সূত্রে, কোন বিষয়ে চুক্তিপত্র বা সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য এ সকল দেশ তার লুটেরা ঘুষখোর বাহিনী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর রাতে ৫ তারা হোটেলে সুন্দরী রমনীদের দিয়ে হাত পা টিপাচ্ছে? ৭০ বছর বয়সের একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির লজ্জা শরম বা মৃত্যুর ভয় নেই কেন? আওয়ামী লীগ এ ধরনের নাস্তিক নিমক হারামী শয়তান জালিমদের কোন দিন প্রশ্রয় দেয়নি । আজ কেন দিচ্ছে? কি জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে নাই, তাই কি মোজাম্মেলদের ডিস্কো নাচের সময় হয়? নেত্রী যেদিন হজ্জব্রত পালনের জন্য সৌদি গেলেন ঠিক সেদিনই মোজাম্মেল এসেছে জামুকা ও মন্ত্রণালয়ের লুইচ্চা ঘুষখোর বাহিনী নিয়ে মালদ্বীপে ফিলিপিনো ললনা দিয়ে শরীর মাসাজ করাতে। অথচ মালদ্বীপের সাথে মুক্তিযুদ্ধের কোন প্রকার সংশ্লিষ্ঠতা নেই বা ছিল না। আজ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনকের শেষ চিনহ বঙ্গ নেত্রী শেখ হাসিনা অসুস্থ্য; ঠিক সে সময়ে লুইচ্চা মোজাম্মেল ইউরোপ ঘুরতে যাচ্ছে। এ অর্থ কোথা থেকে আসছে? কার টাকায় মোজাম্মেলের লুটেরা বাহিনী ইউরোপ সফর করছে? আমরা হিসাব চাই; বিচার চাই। কারন মহান মুক্তিযুদ্ধে আমারো অবদান রয়েছে। অবহেলা অবিচার অনাচার মিথ্যাচার ভ্রষ্টাচার যখন তার নিজস্ব সীমা লঙ্ঘন করে তখনি সমাজ দেশ জাতির কেউ না কেউ দেশের কোন একপ্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় তুলে ইতিহাস রচনা। বেচে থাকে কি মরে যায়, সেটি বড় প্রশ্ন নয়; সত্য বলতে পারাটাই বড় যা'জাতিকে বদলে দিতে সাহায্য করে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ র রাষ্ট্র ভাষা উর্দু ঘোষনার প্রতিবাদ একাই করেছিলেন। ছয় কোটি মানুষের মধ্যে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মধ্যমনি। ৫২ র ভাষা আন্দোলনের নায়ক বঙ্গবন্ধুই আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন-প্রতিবাদ কর-অন্যায় অবিচার ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে। কি পেলেন কি না পেলেন এ কথা ভাববার অবকাশ ছিল না বঙ্গবন্ধুর। চির শোষিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত বাঙ্গালী জাতির অধিকার স্বাধীকার আদায়ে একটা জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন ন্যায় সত্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রামে । আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রীর অন্যায় অবিচার স্বজনপ্রীতি দুরাচারের বিরুদ্ধে আমার এ আন্দোলন জাতিরজনকের থেকে শিক্ষা নেয়া নীতি আদর্শের বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযোদ্ধারা আ ক ম মোজাম্মেল হকের কথা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি; করেছিলেন ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের তেজদীপ্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবে ।
কি পেলাম কি পেলাম না? তা খতিয়ে দেখার সময় নেই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার সোনার ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কি পেয়েছে, তা' আজ খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। কেউ ইচ্ছে করলেই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এবং তার আদর্শ নিয়ে ব্যবসা করতে পারে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এত সুনাম এত উন্নয়ন এত ত্যাগ গুটি কয়েক দুর্নীতি পরায়ন মন্ত্রী আমলার কারনে ধূলিসাৎ হতে দেয়া উচিত নয়; সবাই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের ঝড় তুলুন। শেখ হাসিনাকে রক্ষা করুন দুর্নীতির অহেতুক অনাহুত কলংকের হাত থেকে। প্রতিষ্ঠা করুন ডিজিটাল সুখি সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম নেই মুক্তিযুদ্ধা Moktel H. Mukthi মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন আকাল বরিশ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তি। যাকে এলাকার সবাই এক নামেই চেনে। আছে তার আরেকটি পরিচয়,তিনি একজন কন্ঠ শিল্পী। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যিনি গেয়েছেন অসংখ্য গান। মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ গোলাম আম্বিয়ার হাত ধরেই গানের হাতেখড়ি শিখেন মুক্তি।১৯৯০ সালে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকীর মিউজিকে বের হয় তার নিজের লেখা গানের ৩ টা এলবাম।তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মরণে মুক্তির গান নামে একটি এলবাম ও কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো নামের আরেকটি এলবাম,যা ব্যাপক শ্রোতাপ্রীয়তা পেয়েছিল।যেই গান শুনে শেখ হাসিনা কেঁদেছিলেন। অথচ সেই মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ভুমি মন্ত্রনালয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চাকুরী প্রদান করেন এবং নগদ ১ হাজার টাকা ও ৩ বান টিন প্রদান করেন। মুক্তি মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মালদ্বীপ কম্যুনিটি এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক, একজন শিক্ষক,ও কন্ঠ শিল্পী।যিনি ভারতে ট্রেনিং এর সময় অবশরে সহযোদ্ধাদের গান শুনিয়ে সাহস যোগাতেন।১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসা পর বঙ্গবন্ধুর দেয়া সেই চাকুরী হারান হতভাগা মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তি। দেশে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাকে।বঙ্গবন্ধুর দেয়া চাকুরীটি কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জীবনে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় পদে পদে লাঞ্চনার শিকার হতে হয় তাকে।এসব সহ্য করতে না পেরে ১৯৯১ শেখ হাসিনার খালু মরহুম এস এ জালালের মাধ্যমে পাড়ি দেন জাপানে। যিনি ১৯৭১ সালে জাপানের বাংলা রেডিওর সংবাদ পাঠক এবং ক্যানাডার ইকোনোমিক্স মিনিষ্টার ছিলেন । ১৯৯৬ সালে আবার দেশে আসেন,১৯৯৭ সালে ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান ঢাকা ওয়েষ্টিন হোটেলের মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূর আলীর পিএস এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু আবারও কপালে নামে দুর্গতি,২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবনের চোখ পড়ে ইউনিক গ্রুপের উপর। একসময় হাওয়া ভবন গ্রাস করে নেয় ইউনিক গ্রুপ,আবারো সেখানে প্রতিবাদ করে বসেন মুক্তি,তখনই নেমে আসে তার উপর অমানবিক নির্যাতন।অবশেষে বাধ্য হয়ে ২০০২ সালে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপ পাড়ি জমান। স্বাধীনতার ৪৬ বছর শেষে নতুন করে যখন মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কাজ শুরু হল,তখন অজানা কারণে বাদ পড়ে গেলেন মুক্তি। যখন শুনলেন মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটি তালিকায় তার নাম উঠায়নি তখন মাতায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। দেশের জন্য যারা জীবন দিতে প্রস্তুত সেই মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই তালিকায়।বিষয়টা অনেকেই মেনে নিতে পারলেন না।৭১ এ যাদের সাথে ভারতে ট্রেনিং নিয়েছেন সেই সহযোদ্ধারাও হতবাক হয়েছিলেন এ ঘটনায়,মুক্তি কখনো ভাবেননি যুদ্ধের এত বছর পর এসে তাকে প্রমান করতে হবে মুক্তিযোদ্ধা বলে। মুক্তি বলেন,কখনো ভাবিনি এরকম একটা ঘটনার সম্মুখীন হব,আমরা ত যুদ্ধে গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭ কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে,নিজের নাম কামাতে নয়।কখনো নিজের জীবনের চিন্তা করিনি।কিন্তু আজ এরকম একটা বাস্তবতার মোখমুখি হব তা কখনো কল্পনা করিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অসীম ভালোবাসা থাকায় প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধুর কথা ভেবে চোখের জল ফেলেছেন মুক্তি, “কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো” এ বাক্য আজ সবার মুখে মুখে,কিন্তু এই জনপ্রিয় বাক্যটির জনক হলেন মুক্তিযোদ্ধা মোক্তেল হোসেন মুক্তি। তিনি তার গানে প্রথম এ বাক্যটি ব্যবহার করেন, যা আজও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। তৎকালীন সময়ে দৈনিক বাংলার বানীতে সাংবাদিক শেখ মারুফ পত্রিকায়ও প্রচার করেন ।আমি মন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছিলাম। কোটি টাকার সম্পদ দাবী করিনি; আবেদন করার অধিকার আমার আছে।
আমি বিচার পাইনি; মন্ত্রী অপমান করেছে আমি আওয়ামী লীগ সরকার প্রধানের নিকট বিচার চেয়েছি। বিচার পাইনি। সূতরাং আমার দাবীর জন্য যা'কিছু করার তাই করবো। এখানে পাগলামি ছাগলামির প্রশ্ন কেন? জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ও ১১ দফা দাবী যদি পাগলামি না হয়ে থাকে, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী কর্তৃক লাঞ্ছিত হবার কারনে সে লাঞ্ছিত মুক্তিযোদ্ধা ন্যায় সংগত বিচার প্রার্থনা করছে। এতে পাগলামির কি আছে? আমি বিচার পাইনি; তাই আমার পথে আমাকে এগোতে হবে। আমি আর মুক্তিযোদ্ধা হতে চাইনা। বাচার স্বপ্নও ঐ একই সাথে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সমস্যা; আওয়ামী লীগকেই সমাধান করতে হবে; মহান মুক্তিযুদ্ধে যদি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের দাবীদার হয়, আমি মুক্তিযোদ্ধা এবং দাবীদার। সেখানে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আমাকে অপমান লাঞ্ছিত করে তার কক্ষ থেকে সুবিদ আলী ভুইয়ার কথায় বেড় করে দিতে পারে না; মন্ত্রী যদি অপমান করার অপরাধে শাস্তি না পান, তাহলে দেশে আইন নেই, শাসন ব্যবস্থাও নেই বলেই ধরে নিতে হবে। আমার অস্তিত্বের প্রশ্ন এখানে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমি আমার নিজের অস্তিত্বের দিকটাই প্রথম দেখবো। দেখবো আমার সংসার সন্তান স্ত্রী কন্যা আত্মীয় পরিজন; আমি আওয়ামী লীগের স্বার্থ নৌকার স্বার্থ দেখার আমার অবকাশ কোথায়? দেশ স্বাধীন হয়ে থাকলে আমি মুক্তিযোদ্ধা; মন্ত্রী কর্তৃক লাঞ্ছিত হবার বিচার চাই; অতি সিম্পল; যারা এটাকে গভীরভাবে জড়িয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করতে চান, তাঁদের জন্য বলিঃ "মুক্তিরা একবার জন্মায়, একবারই মরে" মুক্তিরা নীতির সাথে আপোষ করতে জানে না-এ মুক্তিদের জাতিরজনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বাংলার মহা নায়ক কিংবদন্তি বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিখিয়ে গিয়েছেন। বিশ্ববাসী দেখ, দেখ সকল মুজিবসেনা, সকল বি এন পি জামাত জাতীয় পার্টি জাসদ নেতা কর্মী ভাই বোনেরা, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার আবেদন আ ক ম মোজাম্মেল হক গ্রহণই করেনি। লিখিত দিয়ে ফেরত দিয়েছে। কোন আইনে সে ফেরত দিয়েছে-জানতে চাই? সংবিধানে এমন কোন আইন রয়েছে যে একজন মন্ত্রীকে আবেদন করলে তদন্ত ছাড়াই/আইন/রীতি/নীতি/অধ্যাদেশ ব্যতিরেকেই আবেদন সরাসরি নাকচ করা যায়? যেহেতু সে আমার কালকিনি মাদারীপুরের নয়; সে আমার সম্পর্কে কিছুই জানেনা এবং সে কারনেই আমি তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছি। মেজর জেনারেল সুবিদালীর (সুবিধাবাদী খালেদা জিয়ার এজেন্ট) কথায় মন্ত্রী আমাকে অপমান করে বেড় করে দেয়ার কথা বলতে পারে না; সংবিধান এ কথা বলে না। আমি জামাত শিবির বি এন পি আওয়ামী লীগ বুঝিনা; আমি জন্মগতভাবে বাঙ্গালী । বিচার চাই; মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট পত্রিকার মাধ্যমে আবেদন করাতে bangloadeshpress.com অনলাইন পত্রিকাকে হুমকি দিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদ বন্ধ করে দিয়েছে। ঐ ছেলেরা এখন হুমকির মূখে আছে।
is it called democracy? what is called democracy. its my question to all of the highly qualified innocence Bangladeshi citizen. i want reply from central of bangladesh awami league. আওয়ামী লীগের জন্য যদি ৬০ হাজার পোষ্টার করতে পারি ১৭ বছরে, মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে কত হাজার করতে পারবো? মৃত্যুর আগ পর্যন্ত? আমি অনলাইনের সর্ব দলীয় বাঙ্গালী বাংলাদেশীদের নিকট বিচার চাইঃ আমি ভারতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আমার নাম কেন তালিকায় নাই? কিসের স্বাধীনতা? কিসের মুক্তিযুদ্ধ যদি মুক্তিযোদ্ধাদের আওয়ামী লীগ মন্ত্রী অপমান অপদস্ত করে? বিচার চাই। এখনো আওয়ামী বিরোধী শ্লোগান শুরু করি নাই। ঘরের কথা পরের কানে দেই নাই। বিচার চাই। ***************************************************************************************** মন্ত্রী মহোদয় গদি সামলান! হিন্দি সিনেমার ষ্টাইলে আপনাকে শিক্ষা দেয়া হবে। আপনি ডিবি পুলিশের ভয় দেখান। ছেলেদের দিয়ে হুমকি দেন? আপনার মন্ত্রীত্ব! না হয় আমার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি! একটা চাই। আপনিও মুক্তিযোদ্ধা তাই কিছুটা শ্রদ্ধা ছিল, সেটি এখন গোলাম আযমের চেয়েও ঘৃণ্য পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আপনি আমাকে বলেন-আমি মন্ত্রী আর আপনি পাবলিক? আপনি উকিল। জীবন ভর মানুষকে ঠকিয়ে মিথ্যা মামলা চালিয়ে টাকা বানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হয়েছেন? আপনি উকিল হলে আমি মোক্তার! এই পাবলিকের ভোট চুরি করে মন্ত্রী হয়েছেন আর আমাকে হুমকি দেন? মূখ খুলি নাই। এখন থেকে খুলবো। জামূকায় লাল বাতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের "লালবই" দিন তারিখ সঠিক মনে নেই। তবে ১৯৯৭ সালের সম্ভবতঃ বিজয় দিবস অথবা স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আয়োজনে "জামূকা'র ছোট্ট মাঠে একটি অনুষ্ঠান। মুজিববাহিনী প্রধান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক, ডামূড্যার কৃতি সন্তান সাবেক নৌ ও পরিবহন মন্ত্রী মরহুম আব্দুর রাজ্জাক (বঙ্গবন্ধুর রাজ্জাক ) ভাই প্রধান অতিথি-সাথে মঞ্চে ছিলেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সেক্টর কমান্ডার, ক্যাপ্টেন তাজ, সুলতান রাজা ভাই এবং আমার একান্ত বন্ধু সহকর্মী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম। রাজ্জাক ভাইকে মঞ্চেই অনুষ্ঠান শুরু হবার আগেই আমি একখানা আবেদন দিলাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লিখানো সংক্রান্ত। রাজ্জাক ভাই আবেদনটি চৌধূরী সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন "ছেলেটি মুজিবনগরে ছিল, দেখেন। বাস! আহাদ চৌধূরীর পিছনে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে আমার জাপানী জুতা ছিড়ে গেছে। কয়েকদিন পরে দেখলাম জামুকায় লালবাতি জ্বালিয়ে আহাদ চৌধূরী সাহেব বেড় করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নামের "লাল বই" মুক্তি বার্তার নতুন সংস্করন এ লাল বই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই পুড়ে ছারখার করে জ্বালিয়ে লাল করে দেয়। এই লাল বই কার নির্দেশে কার অধীনে কার তত্বাবধায়নে কিভাবে প্রিন্ট করা হল? খাসের হাট (বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের দুই স্বর্ণ পুরুষ দুই ভাই ( বীর বিক্রম শহীদ এস এম নুরুল ইসলাম ও কমান্ডার এস এম সিরাজুল হক) যারা দুই ভাই ৭১ সালে রাওয়ালপিন্ডি থেকে একজন এসেছিলেন পালিয়ে আর একজন ছুটিতে থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়; তাঁদের অধীনেই আমরা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে সর্ব প্রথম মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন দেয়া শুরু করি এবং মাদারীপুরে পাক বাহিনী আসা শুরু করলেই আমরা এক সাথে ভারতে পালিয়ে যাই। মাদারীপুরের নিকট টেকের হাটে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরু ভাই শহীদ হন। লাল বইতে কি তাঁদের নাম আছে? কালকিনি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই অনুষ্ঠানে মাননীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রী শুদু লাল বইতে যাদের নাম রয়েছে, তাঁদের বাদে অন্যান্য সকলের নামই ডেকেছেন আবার কিছু কিছু লাল বইতে নাম থাকা ব্যক্তিদের নাম ডাকা হয়নি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যিনি মোটেও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তাঁর নাম লাল বইতে এলো কিভাবে? সে নামগুলো আপনি বা আপনারা বা সরকার চাইলে আমি দেবো এবং প্রমান করবো। আর যদি আমার এ সকল তথ্যের সঠিক সত্যতা প্রমান না করতে পারি; আত্মহত্যা করবো-জাতিকে এ প্রতিশ্রুতি দিলাম। সূতরাং চৌধূরী সাহেব, যদি সত্যিকারেই একনিষ্ঠভাবে সচেতনতার সাথে সুক্ষভাবে সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই লাল বই করে থাকেন, তাহলে লাল বইয়ে ভুয়া নাম এলো কিভাবে? এবং আসল মুক্তিযোদ্ধাদের নাম নেই কেন? যারা আমার সাথে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আবেদন করেছিল, তাঁদের কারো কারো নাম এলো, কারো নাম এলো না, এটা আসল নকল প্রমানিত হয়নি বলে নয়; টাকার বিনিময়ে; কালকিনি উপজেলায় চলেছে সনদের রমরমা বেচা কেনা। সে বেচা কেনার কারনেই আমার নাম ও আব্দুল মান্নান তালুকদার, হায়দার বেপারী, ইয়াসিন খান, মরহুম মাষ্টার শামসুদ্দিন খান মিলন ও আমাদের ভারতীয় কমান্ডার হানিফ মাহমুদের নাম। তাহলে তালিকায় কাদের নাম এলো আহাদ চৌধূরী সাহেব? আর কত জ্বালাবেন আমাদের? যারা ৭১ এ খাসের হাট বাজারের হিন্দুদের স্বর্ণ সম্পদ লুট করেছে, তাঁদের নাম এলো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। যারা ৭২ ৭৩ এ ডাকাতি করেছে এবং রক্ষীবাহিনীর দৌড় খেয়ে পালিয়ে জীবন বাচিয়েছে, তাঁদের নাম এলো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। যাদের মূখে ৬৯ ৭০ ও ৭১ এ আওয়ামী লীগ নৌকার নাম শোনা যায়নি, তাঁদের নাম এলো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। যারা খাসের হাট বাজারে ৭১ সালে বীর কমান্ডার সিরাজ শিকদার ও নুরু শিকদারকে রাম দা ট্যাঁটা শর্কি নিয়ে দৌড়ালো তাঁদের আত্মীয় স্বজনের নাম এলো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়; আর ৬৯ এর গন অভ্যন্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা নায়ক মরহুম মাষ্টার শামসুদ্দিন খান মিলনরা মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকৃতি না নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। আজ তাঁর পরিবার তালিকায় নাম লেখানোর জন্য অসৎ অমুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের দ্বারে দ্বারে স্বীকৃতির জন্য কাঙ্গালের মত ভিক্ষা চায়; আপনাদের লজ্জা করে না? আপনাদের কি আল্লাহ্‌ তায়ালা চোখে কোন লজ্জা শরমের ছোয়া লাগায়নি? আর কত ব্যবসা করবেন এই হতভাগা দিন মজুর নিরীহ গরীব অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সাথে? আল্লাহ্‌র গজব পড়বে আপনাদের উপর একদিন-সেদিন হয়তো আমি থাকবো না। দেখে যেতে পারবো না। আর কত এই মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে রাজনীতি ধান্দাবাজী চলবে? আর কত বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর অসহায় পরিবার আপনাদের পা'চাটতে থাকবে? আর কত কাল এই তালিকা লীলা চলবে? আর কত এই তালিকা বাণিজ্য চলবে? আমাদের ক্ষমা করেন; রেহাই দিন। বন্ধ করুন এই সার্কাস! আপনাদের পকেট গরম হবার কলঙ্কিত অধ্যায়ের কারনেই লাল বই নীল বই সবুজ বইয়ের পাতায় ৭১ এর শিশুর নাম। আপনাদের দুর্নীতির ফসল আজকের এই জাতীয় সমস্যা। আপনাদের সরম লজ্জা নাই; আপনারা বেহায়া বেশরম বেগারত তাই আবারো জামূকার গদির লোভে নিজের আত্মীয় স্বজনদের বিলিয়ে দিয়েছেন প্রচার চালিয়ে আবার জামূকা দখলের জন্য। জিয়াউর রহমান ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে, আমরা জিয়ার মরণোত্তর বিচার চাই; আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে সীমাহীন দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি অনিয়ম এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত করার অপরাধেও বিচার চাই; স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আমরা স্বাধীন করেছি; আমাদের উপর কোন প্রকার অবিচার জুলুম নির্যাতন অবজ্ঞা অবহেলা করা হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। আমরা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিচার চাই; মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা। *********************** ১৯৭১ সালে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই তখন কেঊ ই সনদ, ভাতা, স্বীকৃতি, চাকুরী চিন্তা করে তা করিনি। দেশের প্রতি মমত্ববোধ আর সময়ের প্রয়োজনে জাতিরপিতার আহবানে যার যা ছিল তা নিয়ে নিজের সাধ্য অনুযায়ী শত্রুর মোকাবিলা করেছি। কেঊ সিমান্ত পাড়ি দিয়ে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধ করেছি কেঊ বা দেশে থেকেই শত্রুর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল গেরিলা ক্যাম্প স্থাপন পাহারা দেয়া শত্রু অধ্যুসিত এলাকায় গিয়ে অপারেশন এ সাহায্য সহ না না ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি। স্বাধীনতার পর আবার নিজের শিক্ষা ও কর্ম জীবনে ফরে গিয়েছি। অনেকেই কোন ডকুমেন্টস সংগ্রহ ও সংরক্ষন করিনি আবাত ইতিমধ্যে অনেকে হারিয়ে গেছে ইতিহাসের অতলে। ৭১:এর ১৬ ই ডিসেম্বর বিকেলের সেই গানের মত " হয়তো বা ইতিহাসে তোমাদের নাম কোন দিন রবে না বড় বড় লোকেদের ভিড়ে " --------- এক সাগর রক্তের। বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা " সত্যি আমার দেখা অনেক মুক্তিযোদ্ধা আজ হারিয়ে গেছে, আদমজীর এক আনসার কমান্ডার মুক্তি যোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘ দিন অসুস্থ থেকে বছর দশেক আগে মরে গেলেন। আরেক মুক্তিযোদ্ধা ৭৫ এর পর রক্ষি বাহিনী থেকে বহিস্কৃত হয়ে গত ৪২ বছর মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এখন অসুস্থ, এবার যাচাই বাচাই কমিটির তালিকায় তার নাম এসেছে তবে এতে বিভিন্ন পর্যায়ে তার খরছ হয়েছে ষাট হাজার টাকা। সে চায় মরার আগে যদি কিছু টাকা পায়। আর একজনের ভাই কয় দিন আগে ফোন করলো তার মুক্তি্যোদ্ধা ভাই যাকে ৭১ এ আমি জানতাম সে অনেক আগেই গত হয়েছে তার সন্তান আছে কিভাবে তার সনদ সংগ্রহ করা যায়? মালদ্বীপ প্রবাসী আমার অনেক দিনের পরিচিত এক মুক্তিযোদ্ধা যাকে মাননীয় মন্ত্রী ও চিনেন তিনি সময় মত আবেদন না করায় স্বীকৃতি পাবার যোগ্য নন।অথচ এটা ঠিক তিনি সময় মত মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। মুক্তি যোদ্ধাদের যাচাই বাচাই হবে একটি চলমান প্রক্রীয়া। যেহেতু বর্তমান সরকার দেশের বীর সন্তান্দের মর্যাদা পূ:ণ প্রতিষ্ঠায় দৃড় প্রতিজ্ঞ এবং তাদের অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ ও সম্মান দিতে বদ্ধ পরিকর এবং মুক্তি যোদ্ধা সংসদ জাতীয় মুক্তিযদ্ধা কাঊন্সিল ও মুক্তিযুদ্ধ মন্য্রনালয় আছে সেহেতু যখন ই কোন মুক্তিযোদ্ধা আবেদন করবে তা গ্রহনকরে স রকারের সংস্থার মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত যাচাই করে তা চুড়ান্ত করবে। তাতে ই জাতি তার বীর দের খুজে পাবে। এভাবে ঘটা করে জাতির অহংকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাজনীতিক দূর্ণীতিবাজদের নিকট জিম্মি করে অর্থের বিনিময়ে তালিকা করা ভবিষ্যতে পুরো জাতিকে কুলশিত করবে। জয় বাংল 25/8/201 পূন:-- নওগাঁর "মুক্তি যোদ্ধা" গোলজার হোসেন বয়স ৮০ এর উপর, জলিল সাহেব তাকে মুক্তিযুদ্ধে নিয়েছিলেন বলে জানালেন। কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকের কাছে গিয়েছেন অজ্ঞাত করণে এখনো স্বিকৃতি নাই। ঢাকার উত্তরায় রিকক্সা চালান তা আবার এলাকার লোকেরা জানেনা। তিন মেয়ে শিক্ষিত। তিন জন ই শিক্ষকতা করেন। বিয়ে হয়ে গেছে। করো করূনা নিতে চান না। স্ত্রী ও জীবিত। বললেন এ ভাবে চলতে চলতে মরতে চাই। আমি তার কথা শুনে মোহাম্মদ পুর বাবর রোডে জামুকা য় যেতে পরামর্শ দিলাম। আমরা বাঙ্গালীরা ত শুধু পরামর্শ দিতে তৎপর। তাই। যদি সরম লজ্জা থাকে, যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আদৌ কোন শ্রদ্ধাবোধ থাকে, যদি জাতিরজনকের সারা জীবনের কষ্টার্জিত ফসল মহান স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বাস থাকে যদি জাতিরজনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সত্যিকারেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সমর্থন করেন, যদি সত্যিই জীবনে একবার হলেও নৌকায় ভোট দিয়ে থাকেন, অনুগ্রহ করে আর এদিকে পা' বাড়াবেন না। অন্ততঃ ৩০ লক্ষ শহীদ, জাতীয় ৪ নেতা ও জাতিরজনকের বিদেহী আত্মাকে শান্তিতে থাকতে দিন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাউকে খেলতে দেয়া হবে। জীবন যায় যদি যাক। মোজামেল, সুবিদ আলী, ক্যাপ্টেন তাজ, আহাদ চৌধূরী রেদোয়ান আহমেদ সচিব হান্নান, মাসুদ সিদ্দিকী, কার রেহাই নেই; প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ, গর্জে ওঠো মুক্তিসেনার সন্তানেরা। এ দেশ তোমার পিতার অবদান, এর গৌরব মহিমা সার্বভৌমত্ব সন্মান তোমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। আজ আর বঙ্গবন্ধু নেই, জাতীয় ৪ নেতা বেচে নেই; বঙ্গবন্ধুর রাজ্জাক নেই; শেখ মনি ভাই নেই, কে রক্ষা করবে? কে দায়িত্ব নেবে এই হায়েনা বটতলার উকিল মোজাম্মেল হকদের বিতাড়িত করার? হে আল্লাহ্‌, হে রহমানুর রহিম, হে সর্বশক্তিমান, তুমি স্বাক্ষী তোমার ফেরেশ্তাগন স্বাক্ষী, আকাশ বাতাস নদ নদী নালা বট বৃক্ষ তরু লতা মেঘ বৃষ্টি সবুজ বনানী পশু পাখী তোমার পবিত্র ক্বোরান স্বাক্ষী আমি ভারতে প্রশিক্ষন নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে যারা সমাজে রাষ্ট্রে স্বীকৃতির বদলে অপমান করেছে, তাঁদের তুমি বিচার কর; আমি এ বিচার জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে চাই হে পরোয়ারদিগার; আমাকে যারা সমাজে হেয় করেছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে অমর্যাদা করে তাড়িয়ে দিয়েছে; তুমি তাঁদের কঠিন শাস্তি প্রদান কর হে রাব্বুল আল আমিন। আমার দুটি কন্যা সন্তানকে যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে পরিচয় দিতে দেয়নি; সে আ ক ম মোজাম্মেল হকের ধ্বংস চাই; তুমি তাঁদের সন্তানের পরিচয় কেড়ে নাও হে মায়াবুদ; আর যদি আমি মিথ্যা ভূয়া ভন্ড মুক্তিযোদ্ধা হই; আমাকে তুমি ধ্বংস কর হে রাব্বুল আল আমিন। শেখ হাসিনা আজ বড় অসহায়; তার সাথে যারা আছে, ওরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের ধান্দায় ব্যস্ত। ওদের দ্বারা কোন প্রত্যাশা নেই; ওরা হাওয়া ভবনের চেয়েও ভয়াবহ। হায়রে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের শিক্ষিত জনবল এবং দুর্নীতির আখড়া জামূকা? ৪৬ বছরেও মাত্র ২/৩ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করতে পারলো না; লুন্ঠন করেই গেল; গদি বদল হল, কত যোদ্ধা মহাযোদ্ধা আসন গ্রহণ করিলো, উঠিল আবার বসিল, তালিকা করিল; পকেট ভরিল; আবার গেল; অন্যজন আসিল, তালিকা মুছিল; আবার লিখিল; আবার পকেট ভর্তি করিল এতবার ধর্ষণ করার পরেও হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা ত দূরের কথা যাদের নাম রয়েছে তাঁদের নামের আসল বানান টূকুও সঠিকভাবে লিখতে পারেনি; কেমন মূর্খ চন্ডাল জাতিকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন? সামান্য কজন মুক্তিযোদ্ধার নাম পিতার নাম ও ঠিকানা শুদ্ধ করে লিখতে পারে নাই ৪৬ বছরে? এই আহাম্মক জাতিকে রক্ত দিয়ে গেলে হে পিতা? তোমার রক্তের মূল্য এরা দিতে জানে না। এরা তোমার নাম আদর্শ আর চেতনার বুলি আওড়িয়ে ফায়দা লুটে গেল; লুটপাট করে গেল-আমরা সব চুপ নিশ্চুম অধম অক্ষম অচেতন মুড় বাঙ্গালী রবী ঠাকুরের ভাষায় মানুষ না হয়েই মনুষ্যত্বের দাবী করে গেলাম। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টের কোটি কোটি টাকা লুটপাট, বেতন ভাতা উতসব ভাতা গ্রহণ করে সবশুন্য ঝুরি করেও একটি সঠিক তালিকা প্রণয়নে আওয়ামী লীগ, বি এন পি জাতীয় পার্টী আবার বি এন পি আবার আওয়ামী লীগ আবার বি এন পি এবং শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার বদল হল, কোটি কোটি টাকা মন্ত্রী সচিব আমলা কর্মচারী কমান্ডারগণ লুন্ঠন করিয়াও মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেনি; এ লজ্জা কার? এ লজ্জা হতভাগা শেখ মুজিবের? এ লজ্জা জাতীয় ৪ নেতার? এ লজ্জা শেখ হাসিনার? এ লজ্জা জেনারেল ওসমানীর? এ লজ্জা মুক্তিযুদ্ধের সকল নিবেদিত বুদ্ধিজীবী জ্ঞানি গুনি প্রাজ্ঞ নীতি নির্ধারকগণের? এ লজ্জা বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির? এ লজ্জা কার? আ ক ম মোজাম্মেল হকের ত কোন লজ্জাই নেই; বিশ্ব বেহায়া হুসেইন মূহাম্মদ এরশাদের থেকে ছিনিয়ে এনে এ উপাধী মোজাম্মেল হক সাহেবকেই দেয়া হল। জামূকার চেয়ারম্যান, বদল হল কতবার? নেইম প্লেট বদল হল কতবার? কোন কোণ চেয়ারম্যান ও কমিটির বিভিন্ন অধঃস্থন কমান্ডারগণ এই ৪৬ বছরে কত শত কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন? কে হিসেব নেবে আর কে হিসেব দেবে? মন্ত্রী ও সচিব থেকে পিওন পর্যন্ত এ যাবত যত টাকা বেতন নিয়েছে, যত ঘুষ নিয়েছে, টেবিল থেকে চেয়ার পর্যন্ত এমন কি অফিসের জ্বানালা দরজাও ঘুষ গ্রহণ করেছে, তাতে একটা নাম লেখার দাম পড়েছে ১২ কোটি টাকা।
এই লুন্ঠন এই যে হরিলুটের বাতাসা বিতরন এর থেকে আসল মুক্তিযোদ্ধার ঘরে কত টাকা গিয়েছে? কে হিসেব দেবে? জাতিরজনক নেই; জিয়াও নেই, এরশাদ অর্ধ উন্মাদ, বাকী ঘসেটি বেগম আর শেখের বেটি। কার নিকট মুক্তিযোদ্ধারা যাবে? কার নিকট হিসেব চাইবে? কে দেবে হিসেব? বন্ধ হোক এ হরিলুট বাতাসা। বন্ধ হোক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে প্রতারনার এ যন্তণাদায়ক হরিলুটের খেলা। বন্ধ হোক জাতিরজনকের বিদেহী আত্মাকে অশান্তিতে রাখার হীন পায়তারা। বন্ধ হোক ৩০ লক্ষ শহীদের বিদেহী আত্মাকে যন্তণা দেয়ার নামে মন্ত্রণালয়ের অরাজকতা।১৯৯৬ টার্মের ভুয়া অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আহাদ চৌধূরী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত সংক্রান্ত প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারি এবং লাল বই নামকরনে সারা দেশ থেকে অসংখ্য অমুক্তিযোদ্ধার নাম লাল বইতে তালিকাভুক্ত করে নিজের পকেট ভর্তি করেছেন।
যে লাল বই এখন আওয়ামী লীগের প্রধান সম্বল বলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধারা দাবী করছেন, সে লাল বইয়ে অসংখ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত করেছেন এই আহাদ চৌধুরী । একবার লুট করে খেয়েছেন। আবার আসতে চাইছেন। এদের আবার সুযোগ দেবার বদলে এদের প্রত্যাহার করুন; ঘৃণা করুন; নইলে আবার শুরু হবে আহাদ চৌধূরীর ভাগ্নে চান ভাইয়েদের দৌরাত্ব লুন্ঠন এবং সন্ত্রাস।মহান যুদ্ধের মহিমাকে যারা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কলুষিত করেছে, তাঁদেরকেই আবার ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ন করে লুটপাটের সুযোগ দিলে ৩০ লক্ষ শহীদ ও জাতিরজনকের সাথে বেঈমানী করা হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তকরণের নামে কোটি কোটি টাকা উপার্জন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী অতিথিদের "মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সন্মাননা" পদকের স্বর্ণ চুরি করে দেশি বিদেশী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বেঈমানী করা ক্যাপ্টেন তাজের বিরুদ্ধে কেন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হল না? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাজুলকে কলকাতায় জড়িত থাকার বিষয়টি জানায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাদের মতামত ইসলামের অব্যবহারণে দাখিল করেছে, যারা এখন খুব কমিটির প্রধান। গত বছরের ২4 এপ্রিল প্যানেলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিদেশী বন্ধুদের কাছে স্বর্ণের ক্রিস্টদেরকে সোনার পরিমাণের চেয়ে কম পরিমাণে অভিযোগের তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তদন্তের জন্য এটির আহবায়ক মো। আফসারুল আমিনসহ একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মৃত্তিকা প্রদত্ত কর্মসূচির আওতায় আক্রান্ত হন। জালিয়াতি অভিযোগের পর, মন্ত্রণালয়, যখন এটি AKM Mozammel হক দ্বারা চালানো হয়, একটি কমিটি গঠিত। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্তে তাজুলের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, 13 মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, সাবেক সচিব মিজানুর রহমান ও কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং এই দুর্নীতির বেসরকারি সরবরাহকারীরা।দেশে কি বিচার ব্যবস্থার এতই অবনতি হয়েছে যে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী লাঞ্ছিত করছে আর তার বিচার হচ্ছে না? তাহলে জামাত বি এন পি র অত্যাচারী স্বৈরাচারী সরকার আর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সফল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? জামাত শিবির মুক্তিযোদ্ধাদের মার ধর করে, আমরা প্রতিবাদ করি। আজ আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী ভারতে প্রশিক্ষন নেয়া একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করছে; তার কেন প্রতিবাদ হল না? তার কেন বিচার হবে না? তাহলে কি আওয়ামী লীগ সরকার ও মন্ত্রী পরিষদ স্বেচ্ছাচারী হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখতে যাচ্ছে? হারিয়ে যেতে বসেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ মহিমা গৌরব ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের তপস্যা সাধনা শ্রম ও জেল জুলুমের মহাত্ম? ৩০ লক্ষ শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা কি এই আ ক ম মোজাম্মেল হকদের দ্বৌরাত্বের নিকট হেরে গেল? ২ লক্ষ ৪০ হাজার মা বোনের ইজ্জত ও সম্ভ্রমের কি মর্যাদা প্রদান করলো আওয়ামী লীগ? প্রতিকার চাই। বিচার চাই; এটাই শেখের বেটির নিকট শেষ প্রত্যাশা। আওয়ামী লীগের পা চাটেন? চাটেন, এই নিচের ছবিটি কার জানেন? আমার ভারতের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিউজিল্যান্ড প্রবাসী হানিফ মাহমুদের। শুনে বড় কষ্ট পাবেন যে এই হতভাগা হানিফ মাহমুদের নামও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই। এর পরেও আ ক ম মোজাম্মেল হকের মত শুয়োরের বাচ্চাদের আপনারা ভোট দেবেন? মন্ত্রী বানাবেন? জুতা পেটা করুন ওদের। ওরা মুক্তিযোদ্ধা নামের কলঙ্ক। ওরাই প্রকৃত রাজাকার। ওদের ফাঁসি দিন যারা গরীব দুখি হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কেটে দিয়ে নিজেদের আত্বীয় স্বজন ও রাজাকারের বংশধরদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ভাতা প্রদান করে। মোজাম্মেল হকদের প্রতিশোধ নিতে হবে ব্যালটের মাধ্যমে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে; মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিয়েছে আর ক্যাপ্টেন তাজ আহাদ চৌধূরী রেদোয়ান আহমেদ সুবিদ আলী ভুইয়া ও আকাইম্মা মোজাম্মেল হককে দিয়েছে কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স করার সুযোগ। সূতরাং "আপনার মন্ত্রীদের কর্মকাণ্ডের সুফল কুফল দুটোই আপনি ভাগিদার কারন আপনি দলীয় প্রধান এবং সরকার প্রধান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, খবর নিন; কি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে? কি করছে আপনার গুনধর মন্ত্রীগণ? কি করছে দেশের জেলা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের নামে, বঙ্গবন্ধুর নামে কমান্ডার নামের ডাকাতদল? বিগত বছরের সকল উন্নয়নের প্রশংসা যেমন আপনার প্রাপ্য ঠিক আমলা মন্ত্রী নেতা নেত্রীদের অপকর্মের দুর্নামও আপনার জীবন খাতায় লিপিবদ্ধ হবে; ইতিহাস তাই বলে। জাতিরজনক চুরি করেনি, জাতিরজনক সরকারী কোষাগার থেকে নিজের বেতনও অনেক সময় গ্রহন করেন নি; সেই বংগবন্ধুকেই এই গাজী গোলাম মোস্তফাদের মত চোরের দল কম্বল চুরি করে আওয়ামী লীগের ৩০ বছরের সুনাম খ্যাতি অর্জন এবং বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ তিতিক্ষাকে ধুলায় লুন্ঠিত করে কলঙ্কিত করেছিল। আপনি কি তেমনি কলংকের থেকে বাচতে পারবেন? মোটেই না। চুরি করে ডাকাতি করে সন্তান আর মানূষ ডাকে চোরের বাবা বলে। আওয়ামী লীগের অধঃপতন হোক, এমন কুশব্দ যেনো মূখে না আসে কখনো; কিন্তু পতনের বাঁশী কি শুনতে পান না আপা? আওয়ামী মন্ত্রী নেতাদের দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি জামাত বি এন পির লোভী সন্ত্রাসীদের দলে ভিরিয়ে নিজের পকেট ভারী করার জঘন্য মনোবৃত্তির সংবাদ গুলো কি আপনার নিকট যায় না? আপনার অফিসে বাসায় চারিদিকে যে চামচগুলো তেলের ডিইব্যা নিয়ে আপনার পিছনে ২৪ ঘণ্টা দৌড়ায়, ওরা কি আপনাকে ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষের মত দুঃসংবাদগুলো পৌছায়? আমার মনে হয় না। আপনি প্রতিদিনের সংবাদ পত্রে যা পড়েন, যা শোনেন, তাঁর অন্তরালের সংবাদ আপনাকে পড়তে দেয়া হয় না। আল্লাহ্‌ আপনাকে দীর্ঘায়ু দান করুন। অবহেলিত আসল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সহায়তা করুন।
মোকতেল হোসেন মুক্তি 
মুক্তিযোদ্ধা 
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি 
মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ 
মালদ্বীপ বঙ্গবন্ধু পরিষদ 
সময়৭১ 
কন্ঠশিল্পী 
সঙ্গীত শিক্ষক 
মালে 
মালদ্বীপ

Friday, June 9, 2017

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আব্দুল গাফফার চৌধূরী


এজন্য প্রথমে তিনি আরবান মিডলক্লাস ও পেশাজীবীদের মধ্যে কলোনিয়াল যুগের শ্রেণী বৈষম্য বাকশাল ব্যবস্থায় ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলেন। আমার পাঠকদের মধ্যে যারা প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেছেন তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আইনজীবীদের মধ্যে চারটি শ্রেণী ছিল। ব্যারিস্টার, এ্যাডভোকেট, প্লিডার এবং মোক্তার। এই পেশায় ব্যারিস্টার ও এ্যাডভোকেটরা ছিলেন অভিজাত, প্লিডার মধ্যম অভিজাত এবং মোক্তারেরা হরিজন শ্রেণী।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতে তাঁর সম্পর্কে যত লেখা লিখেছি, তাঁর মৃত্যুর পর সেই লেখার সংখ্যা বহু গুণ বেশি। যতই লিখি ততই মনে হয়, তাঁর সম্পর্কে আরও আরও লেখার রয়ে গেছে। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিনই তাঁর সম্পর্কে লিখতে পারব। এতই বৈচিত্র্যপূর্ণ তাঁর জীবন। তিনি মহাদার্শনিক ছিলেন না, মহাপন্ডিতও ছিলেন না। কিন্তু মহাপন্ডিতরা বা মহাদার্শনিকরা যা করতে পারেননি, তিনি তা করেছিলেন। অর্থাৎ একটি লুপ্তপ্রায় জাতিকে তার ভৌগোলিক ও রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তার বিপন্ন সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষা ও ইতিহাসকে রক্ষা করেছেন।

কথাটা বলেছিলেন, ব্রিটেনের প্রখ্যাত বাম দার্শনিক জ্যাক ওয়াডিস। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বে শোষণমুক্ত সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তত্ত্ব প্রচার করেছেন কার্ল মার্কস। কিন্তু তিনি কোন কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি। সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন রাশিয়ায় আইনের ছাত্র লেনিন এবং চীনে স্কুল-শিক্ষক মাও জে দুং। তেমনিভাবে বলা চলে, স্বাধীন অথবা স্বতন্ত্র বাংলার স্বপ্ন সচেতন বা অবচেতনভাবে দেখেছেন অনেকেই; যেমন চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ বসু, ফজলুল হক, শরৎ বসু, আবুল হাশিম। তাঁরা কেউ বিখ্যাত ব্যারিস্টার ছিলেন, কেউ বিলেতে লেখাপড়া করা নেতা, কেউ বিখ্যাত আইনজীবী, কেউবা বিখ্যাত প-িত ও বাগ্মী ছিলেন। কিন্তু সচেতন বা অবচেতন মনের এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন কেউ করে যেতে পারেননি; করেছেন ফরিদপুরের টুঙ্গিপাড়ার একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শেখ মুজিবুর রহমান। তাই জাতির পিতার শিরোপাটি আজ তাঁকেই ধারণ করতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গেছেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা অনুযায়ী দেশটা গঠন করে যেতে পারেননি। তবে দেশ গঠনের সেই পথে পা বাড়িয়ে তিনি তাঁর স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার কাঠামোটা জাতিকে দান করে দিয়ে গেছেন। তাঁর নাম বাকশাল-দর্শন। বাংলাদেশে নব্যধনী এবং নব্য এলিট শ্রেণীর সমন্বয়ে পুরনো কায়েমি স্বার্থের (াবংঃবফ রহঃবৎবংঃ) উত্তরাধিকারী নব্য কায়েমি স্বার্থ গোষ্ঠী এই বাকশাল নাম শুনলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। ড্রাকুলারা যেমন ক্রসচিহ্ন দেখলে ভয় পায়, বাংলাদেশের লুটেরা, সমাজপতিরা এই বাকশাল নাম শুনলে আঁৎকে ওঠে। কারণ এই বাকশাল-ব্যবস্থাটি ছিল পুরনো আমলাতান্ত্রিক শাসন এবং নব্যধনী গড়ে তোলার শ্রেণী শোষণমূলক ব্যবস্থা পরিবর্তনের একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ সফল হলে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ এবং নব্যধনীদের সমন্বয়ে গঠিত গণশত্রু জোটের চক্রান্ত থেকে বাঁচতে পারত দেশটি। ১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত ঘটনাগুলো আর কিছুই নয়, ছিল নিষ্ঠুর প্রতিবিপ্লব। তাতে শুধু জন প্রতিক্রিয়াশীলেরা নয়, বিভ্রান্ত এবং বিচ্যুত বামদের একটা বড় অংশও সাহায্য ও সমর্থন যুগিয়েছিল। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু মাত্র বাকশাল-ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বাস্তবতা ও সাফল্য দেখিয়ে যেতে পারেননি। ব্যবস্থাটি প্রবর্তনের মাত্র আট মাসের মাথায়Ñঅর্থাৎ ব্যবস্থাটি যখন এক্সপেরিমেন্টের আঁতুড়ঘরে তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় এবং ব্যবস্থাটি উচ্ছেদ করা হয়। তারপর গত ৩৮ বছর ধরে চলেছে এই আট মাসের অপরীক্ষিত ব্যবস্থার ঢালাও নিন্দাবাদ। বাম এবং ডান উভয় রাজনীতির তরফ থেকে।

বিস্ময়ের কথা এই যে, বাকশাল-ব্যবস্থাকে ‘একদলীয় শাসন প্রবর্তন’ ‘গণতন্ত্র হত্যা’ ইত্যাদি বলে যখন অনবরত প্রচারণা চালানো হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগের সামনের কাতারের নেতারা এবং আওয়ামী ঘরানার বলে পরিচিত অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শকে ডিফেন্ড করা বা অপপ্রচারের জবাব দেয়ার জন্য এগিয়ে আসেননি। বরং বাকশাল প্রসঙ্গ উঠলেও লজ্জাবতী লতার মতো গুটিয়ে গেছেন। যেন প্রসঙ্গটি এড়াতে পারলেই তাঁরা বাঁচেন। আদর্শের দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ এখানে শত্রুপক্ষের কাছে হেরে গেছে।


আমার কাছে বিস্ময়কর, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কেবল শত্রুপক্ষই তাঁর নামনিশানা মুছে ফেলার জন্য তৎপর হয়েছিল তা নয়, আওয়ামী লীগরাও যারা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক’ বলে এখনও বুক চাপড়ান, তাঁরা সর্বাগ্রে বঙ্গবন্ধুর শেষ জীবনের আদর্শ ও লক্ষ্য বাকশাল দর্শন ত্যাগ করেন, বাকশাল ভেঙ্গে দিয়ে আওয়ামী লীগ নামটিকে তার পাতি বুর্জোয়া চরিত্রসহ পুনরুজ্জীবিত করে তাতে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক দল থেকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দলে এবং গণতান্ত্রিক দল থেকে বাকশাল নামে সমাজবাদী দলে উত্তরণের যে ধারা অব্যাহত ছিল তা রুদ্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় শুধু আওয়ামী লীগের নয়, বাংলাদেশের গোটা ডান ও বাম রাজনীতির দ্রুত পশ্চাৎপসরণ। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে আবার শ্রেণী বিভক্ত সমাজব্যবস্থা এবং তাতে নবউত্থিত লুটেরা শ্রেণীর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বর্তমানে আমার বাম বন্ধুরা যাদের ‘লুটেরা শাসন শ্রেণী’ বলে নিত্যগালি দেন, তাঁরা নিজেদের অজান্তেই নিজেরাও সেই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বর্তমান ডান, বাম, মধ্যবাম, মধ্যডান সব রাজনীতির এবং রাজনীতিকদের উৎস একই সুবিধাবাদী ও লুটেরা নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তাঁদের কথাবার্তা, রাজনীতির খোলসে লাল, সবুজ, হলুদ, বাদামি নানা রঙ থাকতে পারে কারও লাঙ্গল, কারও চাঁদতারা প্রতীক থাকতে পারে, কিন্তু ভেতরে তাঁদের একই রঙ, একই শ্রেণীস্বার্থে তাঁরা বাঁধা। এ জন্যই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি প্রভৃতি এখন বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক আদর্শের দল বলে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশে এদের সকলের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা কেউ কৃষক শ্রমিক বা গরিব মানুষের প্রতিনিধি নন। তারা সকলেই নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরা মুখে বা সজ্ঞানে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু অবচেতনভাবে সামন্ত যুগীয় মনোভাব, পরিবারতন্ত্র এবং একই শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে চলেন। এ জন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এত বিপুলসংখ্যক ফ্রন্ট থাকা সত্ত্বেও তা এতটা বিভক্ত এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার নামেও এরা ওই সাম্রাজ্যবাদেরই রক্ষিতার দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজের বর্তমান ভূমিকা থেকে এই কথার সত্যতার আরও বেশি প্রমাণ মেলে।


বঙ্গবন্ধুর বাকশাল-দর্শন নিয়ে মুক্ত মনে কোন গবেষণা হলে দেখা যেত, তিনি মার্কসবাদী না হয়েও মার্কসের শ্রেণীদ্বন্দ্বে হয়ত বিশ্বাসী ছিলেন। আজকাল দেশ-বিদেশের অনেক নব্যপ-িত শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্বে বিশ্বাসী নন। তাঁরা বলেন, শ্রেণীসংগ্রামের যুগ শেষ হয়ে গেছে। কারণ, সমাজে শোষক ও শোষিত শ্রেণীর চরিত্র পাল্টে গেছে। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, উন্নত ইউরোপেও শ্রেণীসংগ্রামের চেহারা পাল্টালেও মূল সংগ্রামটা শেষ হয়নি। ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচারের সরকারের আমলে কয়েক বছরব্যাপী খনি শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং তা ভাঙ্গার জন্য গোটাব্রিটিশ এসটাবলিশমেন্ট, সেনা-পুলিশ বাহিনী, বিচার বিভাগ, শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ী এবং মিগমিডিয়ার সম্মিলিত চেষ্টার মধ্যে শ্রেণীসংগ্রামের ছবিটি বড় বেশি প্রকাশ্য হয়ে উঠেছিল। রূপটি মারডোকের টাইমস পত্রিকার প্রিন্টিং ওয়ার্কার্সদের দীর্ঘ ধর্মঘটের মধ্যে শ্রেণীসংগ্রামের রূপটি আদৌ ঢাকা ছিল না। শ্রেণীসংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে একটি হোয়াইট কলার ওয়ার্কার্স শ্রেণীর উদ্ভব হওয়ায় এই সংগ্রামের চেহারা পাল্টে গেছে এবং গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম একটা সুবিধাজনক স্থানে আছে। যা হোক, এই তত্ত্ব নিয়ে আজ আলোচনা নয়।

বঙ্গবন্ধু হয়ত বাংলাদেশে শ্রেণীদ্বন্দ্ব ও শ্রেণীসংগ্রাম এড়িয়ে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি এও ভেবে থাকতে পারেন, তিনি যখন দেশ স্বাধীন করে নিজে ক্ষমতায় বসতে পেরেছেন, তখন শ্রেণীসংগ্রাম এড়িয়ে নিজের ক্যারিশমা ও নেতৃত্ব গুণের জোরে বাংলাদেশে উদীয়মান লুটেরা একটি শ্রেণীর মাথা তোলা বন্ধ করে এতকালের শোষিত শ্রেণীরগুলোর অধিকার ও স্বার্থরক্ষা করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতাতেও তাঁদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে পারবেন।

অনুরূপভাবে চিকিৎসকরা ছিলেন এমবিবিএস ও এলএমএফ এই প্রধান দুই ভাগে বিভক্ত। জার্নালিস্ট বা সাংবাদিক বলতে পত্রিকায় প্রুফ রিডারদের বোঝাতো না। তারা ছিল অন্ত্যজ শ্রেণী, সাংবাদিক ইউনিয়নে তাদের সদস্য হওয়ার অধিকার ছিল না। আরও অনেক পেশার ক্ষেত্রে সামন্তযুগীয় এই উঁচু-নিচুর অভিজাত ও অনভিজাত শ্রেণীভেদ আরবান নগর সমাজেও প্রাধান্য বিস্তার করে ছিল।

বঙ্গবন্ধুর বাকশাল-প্রথায় এই শ্রেণীভেদ ও বৈষম্য লুপ্ত করা হয়। আইনজীবীদের চারটি শ্রেণী ভেঙ্গে শুধু এ্যাডভোকেট শ্রেণীতে সকলের পরিচয় সীমাবদ্ধ করা হয়। ব্যারিস্টারদেরও এ্যাডভোকেট হিসেবে পরিচিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মোক্তারদের শর্ট কোর্সের শিক্ষার মাধ্যমে এ্যাডভোকেট হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। মেডিক্যাল স্কুল থেকে যারা ডাক্তারী পাস করে এলএমএফ ডাক্তার নামে পরিচিত হতেন, তাঁদের এক বছরের শর্ট কোর্সে অধ্যয়ন দ্বারা এমবিবিএস হওয়ার অধিকার দেয়া হয়। এলএমএফ ডিগ্রী বাতিল করা হয়। সংবাদপত্রের প্রুফ বিডারদের সাংবাদিক হওয়ায় মর্যাদা দেয়া হয়। আরও অনেক পেশায় এই শ্রেণীভেদ ও বৈষম্য লুপ্ত করা হয়।

এটা ছিল আমাদের কায়েমী স্বার্থ ও অভিজাততন্ত্রভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় প্রচ- আঘাত। এই আঘাতের বৈপ্লবিক গুরুত্ব তখন আমরা অনেকেও অনুধাবন করতে পারিনি। আমার মনে আছে, একদিন প্রখ্যাত আইনজীবী মির্জা গোলাম হাফিজের বাসায় গেছি। দেখি, তিনি রাগে অন্ধ হয়ে বন্ধুবান্ধবের সামনে চিৎকার করছেন। বলছেন, শেখ সাহেব ভেবেছেন কি আমার মতো এক এ্যাডভোকেটকে তিনি একজন মোক্তারের সঙ্গে এক ঘাটে পানি খাওয়াবেন? এটা আমরা হতে দেব না।

তখনকার সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। তাদের দাবি ছিল সংবাদপত্রের প্রুফ রিডারদের সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এই প্রতিনিধি দলে কতিপয় বামপন্থী সাংবাদিকও দেখেছি। তারা প্রুফ রিডারদের সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় সরকারের আইনের ঘোরবিরোধী। আগেই বলেছি, আমাদের ডান বাম সব রাজনীতির উৎস একই সুবিধাবাদী নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তাদের শ্রেণীস্বার্থে আঘাত পড়লে ডান বাম নির্বিশেষে সকলেই যে একই সুরে কথা বলতে পারেন, তার প্রমাণ তখন দেখেছি।

বঙ্গবন্ধু বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তন করতে গিয়ে ভীমরুলের চাকে খোঁচা দিয়েছিলেন। তাঁর পদ্ধতির বিরুদ্ধে শুধু সেনাতন্ত্র, আমলাতন্ত্র নয়, শ্রেণী বিভক্ত সমাজের সকল স্তরের শিরোমণিরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন বাকশাল প্রথা ও তাঁর প্রবর্তককে অবিলম্বে উৎখাতের জন্য। বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তন সফল হলে বাংলাদেশে একটি নীরব বিপ্লব ঘটে যেত। আজকের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, শোষণ ও লুণ্ঠনে জীর্ণ দেশটির চেহারা অন্য রকম হতো।

বাকশাল পদ্ধতিটি দেশে চালু হতে পারেনি। মাত্র আট মাস পদ্ধতিটি নিয়ে বঙ্গবন্ধু পরীক্ষা চালাবার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এই আট মাসের (জানুয়ারি-আগস্ট, ৭৫) পরীক্ষা নিয়ে আটত্রিশ বছর যাবত প্রচারণা চালানো হচ্ছে, বাকশাল ছিল একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও ডিক্টেটরশিপ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি। যাঁরা বুদ্ধিজীবী সেজে, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সেজে এখনও এসব কথা প্রচার করেন, তাঁদের অধিকাংশই পরবর্তীকালে সামরিক শাসন থেকে শুরু করে গণবিরোধী সকল শাসনের গুণগান করেছেন। সেই শাসনের অনুগ্রহভোগী হয়েছেন।

তিন দশকেরও বেশি সময়ের কুৎসা, নিন্দা, চরিত্র হননের একটানা অভিযান ব্যর্থ করে বঙ্গবন্ধু আবার তাঁর উজ্জ্বল নন্দিত রূপটি নিয়ে জাতীয় মানসে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তিনি এখন নন্দিত। কিন্তু তাঁর বাকশাল-পদ্ধতিটি এখনও একশ্রেণীর মানুষের কাছে নিন্দিত। এক্ষেত্রে কুৎসা ও মিথ্যাচার সত্যকে ঢেকে রেখেছে। এই মিথ্যাকে পরাজিত করে সত্যের উদ্ঘাটন প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে এখন বহু বই পুস্তক বেরুচ্ছে, একই সঙ্গে দরকার বাকশাল পদ্ধতি নিয়ে সুষ্ঠু আলোচনা ও গবেষণা। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের স্বার্থেই বাংলাদেশের মুক্ত মনের গবেষক ও ইতিহাসবিদরা একদিন বাকশালের আসল চরিত্র ও লক্ষ্য খুঁজে বের করবেন এবং বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে এই বাকশালও একদিন নন্দিত হবে বিকৃতিমুক্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে।







Monday, June 5, 2017

বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গতবছর রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ৫ কোটি মানুষ নিন্মবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। ' - টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার ৩ বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দেশের অর্থনীতি এখন ঊর্ধ্বমুখী। দেশের শ্রম্বাজার বাজার দিনে দিনে প্রসারিত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন বলছে, সামনের বছরগুলোতে এই বৃদ্ধির হার আরও আশাব্যঞ্জক হবে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, বিপণন প্রতিষ্ঠান, আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা-প্রশাসনিক খাতে, কৃষি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পর্যটনশিল্প, আবাসন, স্বাস্থ্য ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। কাজের সুযোগ বেড়েছে টেলিযোগাযোগ খাত, পোশাকশিল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশে আরেকটি বিকাশমান ক্ষেত্র হচ্ছে ওষুধশিল্প।
দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে ছিল অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এখন এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২১ সামনে রেখে নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ২০১০-১১ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের ভেতরে নতুন সাড়ে ৪৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিদায়ী বছরগুলোতে অর্থনীতির প্রধান সূচকে ইতিবাচক ধারা বজায় ছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ বাংলাদেশ তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে উচ্চাভিলাষী হবার। আমি খুবই আশাবাদি। আমি বাংলাদেশের বাসিন্দাদের বলতে চাই, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। নিউ এশিয়ান টাইগার হবে বাংলাদেশ।“
২০১৬ সালে দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৬৬ ডলারে এবং বিগত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার প্রথমবারের মত ৭ শতাংশে উপরে উঠে আসে। দেশি ও বিদেশি বিনয়োগের পরিমাণ ছিল আশানুরূপ। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের সুযোগ থাকায় বেসরকারি খাতের সমৃদ্ধি ঘটেছে। এ সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা

গত জুনে (২০১৬) অর্থবিভাগ থেকে প্রকাশিত আগামী ৩ বছরের জন্য মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-বিবৃতি শীর্ষক প্রতিবেদন দেখা গেছে, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর্মসংস্থানের জন্য ৬ দফা কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে -
১। পরিকল্পনাগুলো হলো আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যক্তি উদ্যোগের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশকে উৎসাহিত করে বেকারত্ব দূর করা।
২। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
৩। বিদেশের শ্রমবাজারকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য উপযোগী করা।
৪। প্রয়োজনে কূটনৈতিক তত্পরতা বাড়ানো।
৫। বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন দূতাবাস খোলা এবং
৬। সরকারি খাতে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
বর্তমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অর্থের জোগান সহজ করতে সরকার জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে শিল্পোদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব ছাড়া শুধু সরকারি উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল নিয়ে আসতে পারবে না। শিল্পে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিশ্চিত করতে দেশিবিদেশি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য পণ্যের বৈচিত্র্য এবং বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, উন্নয়ন সহযোগীরা ভবিষ্যতেও দক্ষতা উন্নয়ন, নিয়োগযোগ্যতা বৃদ্ধি ও শোভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

ব্যবসা-বানিজ্য ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, মূলধন ব্যয় কমানো, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সব বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার। দেশে বিনিয়গের পরিবেশ আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলতে হবে। গত বছর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। গত বছর ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, নতুন সংযোগ দেওয়া দ্রুততর হয়েছে। উদ্যক্তাদের জন্য ঋণের উপর সুদ হার কমানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিসনেস (২০১৬) ও বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বিষয়ে প্রতিবেদনে (২০১৭) বাংলাদেশের অবস্থান স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝাং।
ঋণ কার্যক্রম
২০১৬ সালের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সময়ে মোট এক লাখ ৭ হাজারের বেশি নতুন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব উদ্যোক্তাদের মাঝে ১ লাখ ১ হাজার ১৯২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১ হাজার নতুন নারী উদ্যোক্তা ৭৮৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) দেশের ৫২ টি জেলার ৪০৩টি উপজেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে স্বাবলম্বী করেছে। চলতি অর্থবছরে পিডিবিএফ ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। 
সামাজিক নিরাপাত্তা কর্মসূচি
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির আওতায় গ্রামীণ জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে সরকার বিগত অর্থ বছরে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। ২০২০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নেওয়া বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১১ সালে এক হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা করে তৃতীয়বারের মতো একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পরিধি আরো বিস্তৃত করে এখন দেশের ৬৪ জেলার ৪৯০ উপজেলার চার হাজার ৫৫০টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৯৫০টি ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে। দরিদ্র প্রবন ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে। এর আওতায় ২০১৭ সালের মে মাস থেকে শিক্ষিত বেকার যুবকদের ৩ মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী দৈনিক ১শ’ টাকা করে ভাতা পাবেন।
গ্রামীণ নারীদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ২৩৭ কোটি ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই প্রকল্পটি মেয়াদ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। গ্রামীণ নারীরা এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পাবে।


অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা
এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের পর্যায়ে উন্নীত করার প্রচেষ্টায় মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকারী ও বেসরকারীভাবে অনুমোদিত মোট ৩৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় অন্তত আরও ৩১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। 
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ মিলিয়ে ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কারিগরি দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পরিচালনার সাথে যুক্ত আছে। পাবলিক খাতের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকার বেসরকারি এবং এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক এবং অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সংস্কারের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন ও নিয়োগযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সরকার বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১০ সাল থেকে স্কিল এন্ড ট্রেনিং এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এসটিইপি) বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকারি এবং বেসরকারিসহ সবধরনের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণের মান দেশীয় এবং অন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য, বাজারমুখী এবং সবার জন্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট এন্ড প্রোডাক্টিভিটি প্রকপ্ল (বি-এসইপি) হাতে নেয় যা ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলবে। এছাড়াও এডিবি ২০১৪ সাল থেকে বেসরকারি খাতের চাহিদা মাথায় রেখে দক্ষতা উন্নয়ন লক্ষ নির্ধারণ করে প্রশিক্ষণ স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সেবা একটি বিকাশমান খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে ৮০০ এর উপরে নিবন্ধিত তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়ার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এবং ৩০ হাজারের বেশি তরুণ সংশ্লিষ্ট পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ তরান্বিত করতে নানা ধরনের কর্মসূচি ও প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখেছে। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষে সরকার এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের উপর জোর দিয়েছে। সরকারের আইসিটি বিভাগ পরিচালিত লেভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড গভরনেন্স, লার্নিং এন্ড আরনিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে থেকে দেশের তরুণদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিবছর ২ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ । প্রতি বছর দেশে ১০ হাজার কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতক তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এদের মধ্যে অনেকেই গুগল, ফেইসবুক বা মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। এছাড়াও বর্তমানে নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক, আই টি ভিলেজ এবং সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কের কার্যক্রম শুরু হলে লক্ষাধিক তরুণের কর্মসংস্থান হবে।
বৈদেশিক শ্রমবাজার
সরকারে নেওয়া কার্যকর উদ্যোগের ফলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মধ্য ডিসেম্বরে রেকর্ড ৭.২ লাখ কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। অভিবাসন ব্যবস্থাপানার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন আইনী পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলো দেশে এবং বহিঃবিশ্বে ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সরকার অভিবাসন ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষে স্মার্ট কার্ড প্রবর্তন, বিদেশ থেকে সহজে অর্থ প্রেরণ, শ্রম বাজার গবেষণা সেল গঠন, দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ এবং অভিবাসিদের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। সরকার নিয়োগদানকারী সংস্থাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং অভিবাসন খরচ কমাতে সরকার ‘ওভারসীস এমপ্লয়মেন্ট এন্ড মাইগ্রেশন ল ২০১৩’ চালু করে।
প্রতিবছর একটি বড় জনগোষ্ঠী দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, তাদের জন্য উন্নত ও সম্মানজনক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাবে সরকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সমীক্ষা অনুযায়ী, কোনো দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ হলে নতুন করে আড়াই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার সেই হিসাবে, আগামী অর্থবছরে প্রায় ১৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

Friday, April 28, 2017

যেভাবে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিদের উত্থান


যেভাবে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিদের উত্থান
রণেশ মৈত্র

যেভাবে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিদের উত্থান

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের যে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে, তাদের কার্যক্রম ক্রমশই সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যেই বহুলাংশে তাদের বিস্তার ঘটাতে পেরেছে। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী তা নিরন্তর অস্বীকার করে এগুলো ‘কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা নয়’ বা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের জঙ্গি উত্থান এক মারাত্নক উদ্বেগের সঞ্চার করেছে এবং তার বহি:প্রকাশ ঘটেছে গত ৯ জুনে প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদনটিতে প্রধানত: বাংলাদেশের সরকারি মহলের কর্মকর্তাদেরই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ইসলামী লেবাস পরিহিত যে তরুণটি ঢাকার একটি জনাকীর্ণ চেকপোষ্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, সে অধুনা তৎপর পুলিশের দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। তরুণটিকে গ্রেফতার করা হয়। অত:পর দেখা যায়, যে একটি চাপাতি এবং লাইসেন্সবিহীন পিস্তল ও ছয়টি বুলেট নিয়ে যাচ্ছিল। তরুণটির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় একটি আতঙ্কের কারণ বিগত তিনটি বছর ধরে বাংলাদেশে ‘নাস্তিক’ অভিধায় অভিহিত করে স্বাধীনচেতা লেখক, মুক্তমনা ব্লগার, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, বিদেশী নাগরিক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অপরাপর নানাবিধ পেশায় নিয়োজিত সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে হত্যা করে চলেছে।
এই হত্যাকারী আসলে কারা সে সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে। তবে এইটুকু শুধু জানা যায় যে তারা ইসলামের নামে ‘জিহাদের কর্মী এবং ক্রমশই তাদের জিহাদ নামক হত্যালীলা অধিকতর সংখ্যায় সংঘটিত হচ্ছে। আটককৃত ঐ তরুণটি পুলিশের নানা প্রশ্নের জবাবে বেশী কিছু বলতে রাজী হয়নি। শুধুমাত্র বলেছে যে তার নাম সাইফুল ইসলাম, বয়স ২৩ বছর এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। কিন্তু মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে চিত্রটি পাল্টে গেল যখন ১৯ বছর বয়সী অপর দু’জন একটি সফল হত্যালীলা পরিচালনা করে ছুটে পালানোর সময় গ্রেফতার হয়ে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রকাশ করে দেয় যে ২৩ বছর বয়স্ক সাইফুল ইসলাম তাদেরই সহকর্মী, কোনো মাদ্রাসা শিক্ষক নয়।
ছোট্ট এই ঘটনাটি বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অধিকতর সতর্ক এবং সক্রিয় হতে বাধ্য করেছে। এখন তারা অনেক গভীরে ঢুকে নানা অজানা তথ্য উদঘাটনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জঙ্গিদের পরিকল্পনা তার বাস্তবায়ন এবং হত্যার উদ্দেশ্য জেনে বাংলাদেশের মানুষ তো বটেই বাস্তবিক পক্ষেই সমগ্র বিশ্বে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের প্রধান মনিরুল ইসলাম তার তদন্ত কাজগুলির বিবরণ জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এই দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৩৯ জনকে এই জঙ্গিরা বর্বরোচিতভাবে হত্যা করেছে এবং এতে ব্যবহৃত অস্ত্র হলো চাপাতি, বন্দুক বা পিস্তল ও বোমা। এই হত্যাকাণ্ডগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাপাতি ব্যবহৃত হয় এবং তাই দিয়ে ভিকটিমের পিঠে আঘাত করে গলা কেটে ফেলতে দেখা যায়। এরকম হত্যা ইদানিং বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এপ্রিলে এভাবে পাঁচজনকে এবং মে মাসে চারজনকে হত্যা করা হয় এবং কমপক্ষে আরও তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে জুনের প্রথমার্ধেই।
গত ৫ জুন একই দিনে উত্তরাঞ্চলের নাটোরের একজন খ্রিষ্টান মুদির দোকানি ও চট্টগ্রামে তথাকার পুলিশ সুপারের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়। অত:পর দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে একজন হিন্দু পুরোহিতকে বিশাল মাঠের মধ্যে খুন করা হলো। দীর্ঘ ইন্টারভিউতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের প্রধান মনিরুল ইসলাম তার তদন্ত কাজের ফলাফল খুঁটিনাটি তুলে ধরে বলেন, দুইটি জঙ্গি গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ডগুলি চালিয়ে থাকে। তারা হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক রিক্রুট করেছে, অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং অত:পর এক একজন কমান্ডারের নেতৃত্বে তাদেরকে বিভিন্ন গ্রুপে পাঠিয়ে এই হত্যালীলা পরিচালনা করছে। তারা অত্যন্ত সতর্কভাবে তাদের লক্ষ্য (টার্গেট) নির্দিষ্ট করে যাতে জনমত তাদের পক্ষে থাকে এবং এভাবেই খুনীদের প্রশিক্ষিত টিম গড়ে তোলে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের মিশ্রিত ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলামী সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করে নিখাদ ইসলাম ধর্মীয় রাষ্ট্রে বাংলাদেশকে পরিণত করা।
বাংলাদেশ সরকার এখানে স্বীকার করেন যে ঐ দুটি জঙ্গি গ্রুপই এগুলি পরিচালনা করছে এবং তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে। জঙ্গিদের নেতারা যখন ধরা পড়বেন, তাদের মতে, এই হত্যালীলা ও আক্রমণ বন্ধ হবে। তবে ইসলামী মৌলবাদ যে ইসলামসম্মত নয় তা জনগণকে বুঝিয়ে আনতে হবে।
সরকার এখন বলেছে, উভয় জঙ্গি গ্রুপের মূল নেতাদেরকে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন- ঐ নেতারাই এই ঘটনাগুলির জন্য দায়ী। পূর্ব ভারতের সংলগ্ন মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে ১৯৭১ সালে এবং তখন একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকার একতা গড়ে প্রায় তিন দশক শাসন কাজ পরিচালনা করে। ঐ সময়েই ইসলামী মৌলবাদের প্রসার ঘটতে শুরু করে। ২০০৯ সালে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতায় পুনরায় অধিষ্ঠিত হন বিপুল সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে শাসন ক্ষমতায় বসেন। তবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠির কাছে আজও গ্রহণযোগ্য হয় নি-তাই গোঁড়া ইসলামী সংস্কৃতি প্রবর্তিত হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গিরা ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদকে সমাজে বহুলাংশে হেয় ও অগ্রহণযোগ্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিশ্বাসী সরকারটিকে আত্নরক্ষামূলক অবস্থানে ফেলতেও সক্ষম হয়েছে। ফলে, একদিকে সরকার হত্যাকাণ্ডগুলির প্রতিবাদ জানাচ্ছে, অপরদিকে লেখকদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে বা তার সমালোচনা করে না লেখার আহবান জানিয়েছে-আহবান জানিয়েছে ‘অস্বাভাবিক মৌনতা’র সমর্থনে কোনো কিছু না বলতে।
এ বিষয়ে ইনষ্টিটিউট অব ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর পরিচালক অবসর প্রাপ্ত মেজর আব্দুর রশীদ বলেছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালালে হত্যালীলা বন্ধ হবে কিন্তু সরকার ততটা এগুতে রাজী না; এই ভেবে যে তার প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া হতে পারে। দেশের রাজনীতি এখন দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে একটি ধর্মনিরপেক্ষ অপরটি ইসলামভিত্তিক। এ কারণেই সরকার অত্যন্ত সতর্ক।
এ বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, যখন মৌলবাদীদের ব্যাপক ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে ‘শাহবাগ আন্দোলন’ নামে পরিচিত শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে চেষ্টা করা হয়, জঙ্গিরা তখন ইচ্ছাকৃতভাবেই লোকজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে হত্যাভিযান শুরু করে। শাহবাগ আন্দোলন গড়ে ওঠে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অবসানের দাবীতে এবং ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবীতে। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে যখন বেশ কয়েকজনকে ফাঁসি দেওয়া হলো তখন ইসলামী জঙ্গিরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
উল্লেখ্য, শাহবাগ আন্দোলনটি ২০১৩ সালে গড়ে ওঠে ব্লগারদের নেতৃত্বে।
মনিরুল ইসলাম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এই হত্যালীলা চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে দুটি জঙ্গি গ্রুপ। এক, আনসার আল ইসলাম- যারা অত্যন্ত ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দুর্ধর্ষ খুনি গড়ে তুলেছে তাদের অপারেশন কমান্ডারদের দ্বারা। এসব কমান্ডারদের নাম প্রকাশে তিনি অবশ্য অস্বীকৃতি জানান; কারণ তাদেরকে কঠিন নজরে রাখা হয়েছে। তবে এদের নেতা বা কমান্ডাররা ২৫ জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত খুনি তৈরি করেছে-যাদের কেউ কেউ সাম্প্রতিক ৩/৪টি আক্রমণ পরিচালনা করেছে। দ্বিতীয়ত: জামাতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ-জেএমবি। এদেরকে চিহ্নিত করা হয় ২০০৫ সালে সারা দেশে একই সাথে প্রায় ৫০০ বোমা ফাটিয়ে ছিল সাফল্যের সাথে। এদেরই একটি অংশ এখন অধিকতর সক্রিয়।
সাক্ষাতকারে মনিরুল ইসলাম অবশ্য আরও বলেন যে এই দুটি গ্রুপই দুর্ধর্ষ ইসলামী জঙ্গিগ্রুপ হলেও এরা কেউই আল কায়েদা বা আইএস জাতীয় আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গি সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এই গ্রুপ দুটি শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে ত্বরিত সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে একজন ব্লগারকে হত্য করে এই অভিযোগ এনে যে তিনি সরাসরি ইসলামে বিরুদ্ধে লিখে থাকেন। তিনি লিখতেন ‘থাবা বাব’ এই ছদ্মনামে। ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কতিপয় মেধাবী ছাত্র এই নামে লিখতেন এবং তার প্রতিক্রিয়ায় জসীম উদ্দিন রাহমানি নামক ৪৫ বছর বয়স্ক একজন ইসলামী খাদেম ঐ ব্লগারদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। অবশ্য জসীম উদ্দিন রাহমানিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অার ৩২ বছর বয়স্ক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একজন ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ, আনসার আল ইসলামের অপর একজন নেতা জুনিয়র ছাত্রদেরকে জসীম উদ্দিন রাহমানির উদ্দীপক বক্তব্য দিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলে থাবা বাবা নামের লেখকদেরকে হত্যা করতে উত্তেজিত করে তুলতে থাকে।
ঐ রেদোয়ানুল ইসলামের বক্তব্য ছিল, ‘একজন আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী হিসেবে তাদেরকে হত্যা করাটা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’ আটক হওয়া একজন আদালতে এমন বক্তৃতার কথা স্বীকারও করেছে। সে আদালতে বলেছে, ঐ বক্তব্যে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা থাবা বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে- কারণ থাবা বাবা আল্লাহকে অপমানিত করেছে। আটক ওই জঙ্গির নাম ফয়সাল বিন নঈম (২৪)। সে বলেছে, থাবা বাবার ছবি ফেসবুকে দেখে এবং তখন থেকে তাকে খুঁজতে থাকে এবং এক পর্যায়ে অনুরূপ চেহারার একজননের সন্ধান পায় শাহবাগ আন্দোলনকারীদের মধ্যে। অবশেষে একজন ৩২ বছর বয়স্ক আর্কিটেক্ট-যার নাম আহমেদ রাজীব হায়দার তাকেই থাবা বাবা হিসেবে চিহ্নিত করে। অত:পর রাজীবের দৈনন্দিন কাজের রুটিন অনুসরণ করে শেষ পর্যন্ত একদিন তারা তিনজন মিলে রাজীবের বাড়ীর সামনে রাত্রি প্রায় ৯টার দিকে পেয়ে যায়। নঈম তখন চাপাতি দিয়ে তার মাথার পেছনে, গলায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ঐ আকষ্মিক আঘাতের ফলে।
এরপর প্রধান ইসলামী জঙ্গি গ্রুপ হিসেবে আনসার আল ইসলাম প্রচার করতে শুরু করলো যে নাস্তিক ব্লগারদের হত্যাকারীরাই হলো প্রকৃত ইসলাম সেবক। অন্তত: দুটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশিত কয়েকটি লেখা তাদেরকে আরও বেশী করে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং পাঠকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশও এতে ক্ষুব্ধ হন বলে অভিযোগ। এরা শুরুতে শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থকও ছিলেন। পরবর্তী দুই মাসে আরও দুইজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়। পুলিশ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব ছাত্রকে জঙ্গি হিসেবে সক্রিয় ছিল তাদেরকে গ্রেফতার করতে শুরু করে। বিশেষ করে যারা হায়দার হত্যায় জড়িত ছিল। পুলিশ পুনরায় রাহমানিকেও গ্রেফতার করে। এরফলে আনসার আল ইসলাম আরও বেশী হত্যাকাণ্ড পরিচালনা থেকে বিরত হয় এবং এরাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বলেও পরিচিত। কিন্তু তারা পুনরায় পুনর্গঠিত হয় সন্ত্রাসী সেল এ যার সংখ্যা জানা যায়নি।
মনিরুল ইসমাল বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আনসার আল ইসলাম অভিজিত রায় নামক আমেরিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশী ব্লগারকে ঢাকায় হত্যা করে। অভিজিত রায় আমেরিকাতে একটি বায়োটেকনোলজি ফার্মে দিনে কাজ করতেন এবং রাত্রিতে নানা বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি করতেন যার মধ্যে ধর্ম, বিজ্ঞান, সমকামিতা প্রভৃতি ছিল। বিপুল সংখ্যক আনসার আল ইসলাম জঙ্গিকে কারারুদ্ধ করার পর জেলের ভেতর থেকে পুলিশ এক গোপন তথ্যে জানতে পারে যে পুনর্গঠিত আনসার আল ইসলাম তাদের কর্ম কৌশল পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং তারা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে বিপ্লবী করতে মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে রিক্রুট করতে শুরু করেছে। মাদ্রাসার শিক্ষকরাও বাদ যাচ্ছেন না। ২০১৩ সালে ব্লগারদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষক ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদ সংগঠিত করতে দেখে তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রিক্রুটের চাইতে মাদ্রাসাগুলির উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করতে শুরু করে। অত:পর তারা আরও গুরুত্ব দিয়ে আদর্শগত ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে থাকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে।
অভিজিত রায়ের হত্যার এক মাস পরেই ওয়াশিকুর রহমান বাবু (২৭) নামক অপর একজন ব্লগারকে হত্যা করে। তারা একটি এপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে সেখানে দুইজন সিনিয়র অস্ত্র প্রশিক্ষক থাকতো একটি ভষ্যিতে খুনী হিসেবে প্রশিক্ষণ নেবেন এমন একটি গ্রুপের মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে। একজন শিক্ষা দিত কিভাবে চাপাতি দিয়ে আঘাত করলে মানুষ নির্ঘাত খুন হয় এবং কিভাবে পিস্তল ব্যবহার করতে হয় যদি চাপাতি দিয়ে আঘাতের সময় কেউ ছুটে আসে তাকে বাঁচাতে এমন লোকজনদের হটিয়ে দিতে। নিহত ব্লগার আশিকুর রহমান বাবুর ছবি এবং ঠিকানা তাদের হাতে দিয়ে বাবুর বাড়ীর কাছে মহড়া দিতে পাঠানো হতো এটা নির্ধারণ করতে যে; কোন পরিস্থিতিতে কখন নিরাপদে হত্যা করা যেতে পারে। অন্যদিকে বাবুর কিছু সংখ্যক নির্দিষ্ট লেখা পড়িয়ে ঐ প্রশিক্ষণার্থী গ্রুপকে জিজ্ঞেস করা হতো, এই সব ধরণের লেখা যে লেখে তার শাস্তি কি হওয়া উচিত? শিক্ষার্থীরা সমস্বরে জবাব দিত ‘একমাত্র মৃত্যু’।
Moktel H. Mukthi's photo.মনিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ এখন এদেরকে ধরার সর্বাত্নক প্রচেষ্টা করছে। সন্দেহভাজনদের ছবিসহ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে যে, ‘যারা বা যিনি এদের ধরার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য দিতে পারবে তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে। অন্য জঙ্গি গ্রুপ জামাতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ-জেএমবি অবশ্য আনসার আল ইসলামের চেয়ে কম সক্রিয়। কতিপয় ভুল পদক্ষেপের কারণে তাদের সমর্থক সংখ্যা কমে গেছে। এই গ্রুপ ৫০ থেকে ১০০ জন মাদ্রাসা ছাত্রকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল খুনী হিসেবে তাদেরকে চারজন করে এক একটি গ্রুপে সংগঠিত করেছিল। কিন্তু এরা এমন ব্যক্তিদের খুন করে ফেলে যারা ব্যাপক সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অন্যজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক যিনি দরিদ্র রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিতেন।
যখন হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করা হলো, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেল যে তারা ৬৬ বছর বয়স্ক একজন জাপানী নাগরিককে হত্যা করেছে। অথচ ২০১৫ সালেই তাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছিল। ফলে এই খুনীরা দ্রুত জনপ্রিয়তা হারায় এবং জনগণ ওই খুনীদেরকে ধরতে পুলিশকে ব্যাপক সহযোগিতাও দেয়। পুলিশ এখন তাদের নেতাদেরকে ধরতে সচেষ্ট। বাংলাদেশে বর্তমানে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, বলেন মনিরুল ইসলাম।
অনেকে লুকিয়ে আছেন-অনেকে দেশত্যাগী হয়েছেন-আবার অনেকে তাদের দৈনন্দিন রুটিন পরিত্যাগ করে লেখালেখি ছেড়েছেন এবং এমন কি, সন্তানদের স্কুলে আনা নেওয়াও ছেড়েছেন। এই জঙ্গিদের কার্যকলাপের ফলে জাতিকে এই মূল্য দিতে হচ্ছে, বলেন সুধীজনেরা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের ইন্টারভিউ নিয়ে লেখাটি হয়তো আগ্রহী পাঠক পাঠিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে এবং দেশের পরিস্থিতি বুঝতেও কিছুটা সহায়ক হবে। পাবনার আশ্রমসেবক হত্যাকাণ্ড লেখাটি শেষ হতে না হতেই জানলাম, গত ১০ জুন ভোরে পাবনার বিখ্যাত (এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সমৃদ্ধ) হেমায়েতপুরের শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমে ৪০ বছর ধরে সেবক হিসেবে কর্মরত ৬২ বছর বয়স্ক নিত্যানন্দ পান্ডেকে ভোর বেলায় নৈমিত্তিক প্রাত:ভ্রমণকালে একই পদ্ধতিতে চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা আঘাতই শুধু করেনি তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
আশ্রম কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই নিত্যরঞ্জনকে হত্যা করা হলো পুলিশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে। কারণ আগের দিন আইজির নেতৃত্বে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা (সম্ভবত: চট্টগ্রামের এসপির স্ত্রী হত্যার পটভূমিতে) সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ঐ দিন রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই জঙ্গি-সন্ত্রাসী ধরার জন্য দেশব্যাপী সমন্বিত সপ্তাহব্যাপী অভিযান শুরু করবে এবং তা করাও হয়। ওই অভিযান শুরুর মাত্র ৬-৭ ঘণ্টা মধ্যেই এবং পবিত্র রমজানের শুরুতেই হেমায়েতপুর আশ্রমের নিষ্ঠাবান সেবক নিত্যানন্দ পান্ডেকে নির্মমভাবে আশ্রমের নিকটেই খুন করা হলো। আমি শোকাহত। আমরা সমগ্র জাতি শোকাহত। গোটা পৃথিবী উদ্বিগ্ন আজকের বাংলাদেশ নিয়ে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)